বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
অন্তিম ওভারে আফগানিস্তানের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৬ রান। মহম্মদ নবির অনবদ্য ব্যাটিং আতঙ্ক ছড়িয়েছিল ভারতীয় শিবিরে। তার মধ্যেই সামি প্রথম ডেলিভারিতে বাউন্ডারি হজম করেন। সামি যখন তৃতীয় ডেলিভারি করতে যাবেন বলে তৈরি হচ্ছেন, তখন ধোনি তাঁর কাছে ছুটে যান। সামিকে কিছু বলেই ফের নিজের জায়গায় ফিরে আসেন ধোনি। বাকিটা ইতিহাস।
সামি একে একে তিন আফগান ব্যাটসম্যান মহম্মদ নবি, আফতাব আলম ও মুজিব-উর-রহমানের উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিক করেন। ১৯৮৭ সালে প্রথম ভারতীয় হিসাবে চেতন শর্মা বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ৩২ বছর পর সেই তালিকায় জায়গা করে নিলেন মহম্মদ সামি।
ঠিক কী বলেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি? জবাবে সামি বলেন, ‘মাহি ভাই আমার কাছে এসে বলল, বেশি কিছু পরিবর্তন করার দরকার নেই। উপরে বলটা রাখিস না। ইয়র্কার দে। হ্যাটট্রিকও পেতে পারিস। এই সুযোগ বার বার আসবে না। মাহি ভাইয়ের পরামর্শ মতোই বল করেছি। সাফল্য এসেছে। ভুবি যদি চোট না পেত তাহলে আমি হয়তো এই ম্যাচটা খেলতাম না। ঈশ্বরের কাছে তাই কৃতজ্ঞ। সুযোগটা কোনওভাবেই হাতছাড়া করতে চাইনি। সংকল্প করেই মাঠে নেমেছিলাম, আর যাই হোক প্রতিপক্ষকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়ব না। বিশ্বকাপের মতো এত বড় মঞ্চে হ্যাটট্রিক করতে পেরে আমি দারুণ খুশি। এর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। সেই সঙ্গে দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল।’
কোহলি যখন শেষ ওভার করার জন্য তাঁর হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন, তখন কী ভেবেছিলেন তিনি? জবাবে সামি বলেন, ‘চিন্তাভাবনা করার জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে ছিল না। এরকম পরিস্থিতিতে নিজের স্কিলের উপর আস্থা রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সামান্য ভুল করলেই ম্যাচটা হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারত। তাই বোলিংয়ে বিশেষ বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করিনি। তাতে রান দিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকত। সামনে কোন ব্যাটসম্যান রয়েছে, সেটা দেখার চেষ্টা করিনি। পরিকল্পনা মতো বল করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ডেথ ওভারে শর্ট বল করলে ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমি স্টাম্প টু স্টাম্প বল করেছি। ইয়র্কার দিলে ব্যাটসম্যানদের হাতে খুব বেশি শট খেলার অপশন থাকে না। মারমুখী ব্যাটসম্যানও সোজা খেলতে বাধ্য হয়। সেক্ষেত্রে উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি রান আটকে রাখাও যায়।’
স্বল্প পুঁজি নিয়ে লড়াই করা কতটা কঠিন সেটা নিজের মুখেই ব্যক্ত করেছেন সামি। তিনি জানিয়েছেন, ‘টসে জিতে আমরা প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছিলাম ৩০০-৩৫০ রান তুলব ভেবে। কিন্তু ২২৪ রানে আটকে যাওয়ার পর হারের আশঙ্কা চেপে বসেছিল। আমরা যে আফগানিস্তানকে ভয় পেয়েছিলাম, সেটা অস্বীকার করা ঠিক হবে না। একটা সময় মনে হচ্ছিল, আফগানিস্তানের কাছে হারতে হবে? তারপর ঠিক করি, নিজেদের দক্ষতার উপর আস্থা রেখে বল করব। যশপ্রীত বুমরাহ বলেছিল, উইকেট নেওয়ার জন্য ঝাঁপাব না। তাতে রান বেরিয়ে যেতে পারে। বরং আমরা রান আটকাব। যাতে আফগানদের পাল্টা চাপে ফেলে দেওয়া যায়। নবিকে আউট করতে পারলে ম্যাচ হাতে চলে আসবে, সেটা বুঝে গিয়েছিলাম। কারণ, নবি ছাড়া ওদের আর কেউ ম্যাচ জেতাতে পারত না। ৪৯তম ওভারে বুমরাহ অসাধারণ বোলিং করে রান আটকে দেওয়ায় শেষ ওভারে আমার কাজটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল।’
এক বছর আগেও সামির ক্রিকেট কেরিয়ার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল চোটের কারণে। সেই সঙ্গে পারিবারিক সমস্যার জন্য বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সামি বলছিলেন, ‘একদিনের দলে ফিরে আসাটা আমার কাছে বেশ কঠিন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হাল ছাড়িনি। গোড়ালির চোটের কারণে দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে থাকতে হয়েছিল। তাতে শরীর অনেক ভারী হয়ে গিয়েছিল। ওজন বেড়ে যাওয়ায় আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে মিষ্টি খাওয়া ত্যাগ করি। খাদ্যতালিকা থেকে আটার রুটিও বাদ দিয়েছি। সেই সঙ্গে নিয়মিত জিম এবং ফিজিক্যাল ট্রেনিং করেই পুরানো ফর্মে ফিরে আসতে পেরেছি।’