গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
ইংল্যান্ড রওনা হওয়ার আগে মঙ্গলবার মুম্বইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রী ও ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি। সেখানেই এক প্রশ্নের উত্তরে ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করে এবারের বিশ্বকাপের লড়াই অনেক বেশি কঠিন। তার একটা কারণ অবশ্যই ফরম্যাট। দ্বিতীয় কারণটা হল, প্রতিপক্ষ দলগুলি খুবই শক্তিশালী। এমনকী আফগানিস্তানকেও হালকা করে নিলে ভুল হবে। ২০১৫-র পর থেকে আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। বহু অঘটন ঘটিয়েছে আফগান ক্রিকেটাররা। এবারের বিশ্বকাপেও আফগানিস্তান কিন্তু একেবারে অন্যরকম একটা দল হিসাবে উঠে আসতে পারে। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে খেলা হবে। সবাই সবার বিরুদ্ধে খেলবে। আর এরকম ফরম্যাটে যে কোনও দল যে কোনও ম্যাচে অঘটন ঘটাতে পারে। গ্রুপ পর্বের খেলা থাকলে অনেক দলই শক্তি সঞ্চয় করে রাখার চেষ্টা করে। যাতে নক-আউট পর্বে পুরোটা উজাড় করে দেওয়া যায়। কিন্তু এবার সেই সুযোগ নেই। টুর্নামেন্টের প্রথম বল থেকেই লড়াইটা হবে কঠিন। নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স মেলে ধরার চ্যালেঞ্জ থাকবে প্রতিটি ম্যাচেই। প্রত্যেক দল যেহেতু একে অপরের বিরুদ্ধে খেলবে, তাই ম্যাচের গুরুত্ব ও প্রেক্ষাপট হবে আলাদা আলাদা। সেই মতো রণকৌশল সাজাতে হবে।’
প্রথম চারটি ম্যাচেই ভারতের লড়াই কঠিন হলেও বিরাট কোহলি ভালো ফলের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি জানিয়েছেন, ‘দলের মনোবল তুঙ্গে। বিশ্বকাপ এমন একটা টুর্নামেন্ট,যার জন্য চার বছর অপেক্ষা করতে হয়। আমার মনে হয়, যারা বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েছে তারা একশো শতাংশ উজাড় করে দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে তৈরি। যখনই মাঠে নামার সুযোগ পাবো আমরা, তখনই একশো শতাংশ মেলে ধরার চেষ্টা করব। এটাই আমাদের মিশন। ৩০ মে বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে। আমাদের প্রথম ম্যাচ ৫ জুন। হাতে অনেকটা সময় থাকছে ঠিকই, তবে সেটাকে প্রস্তুতির জন্য কাজে লাগাতে হবে। আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। লা লিগা কিংবা প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলি কিন্তু তিন-চার মাস ধরে একই গতিতে খেলার চেষ্টা করে। তাহলে আমরা পারব না কেন? আমরা যখনই শুরু করি, আমাদের লক্ষ্য থাকবে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। দেড় মাস ধরে বিশ্বকাপ চলবে। লম্বা টুর্নামেন্টে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। সেগুলিকে কাটিয়ে উঠে সাফল্য তুলে আনাটাই হবে আসল কাজ।’
ক্রিকেট পণ্ডিতরা বলছেন এবারের বিশ্বকাপে হাইস্কোরিং ম্যাচ হবে। তার উদাহরণ হিসাবে অনেকেই পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সদ্য সমাপ্ত একদিনের সিরিজের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। একই মত বিরাটেরও। তিনি বলেছেন, ‘আমি আগেও বলেছি বিশ্বকাপের পিচ খুবই ভালো হবে। এখন ইংল্যান্ডে ভরা গ্রীষ্ম। পরিবেশ ব্যাটিংয়ের পক্ষে আদর্শ। আমরাও মনে হচ্ছে হাইস্কোরিং ম্যাচ হবে। তবে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের থেকে বিশ্বকাপের ম্যাচের তুলনা করা ঠিক নয়। আমার মতে প্রত্যেক ম্যাচেই ২৬০-২৭০ রান উঠবে। বিশ্বকাপের মঞ্চে স্নায়ুর চাপ নিতে হবে বেশি। তাই লড়াই সহজ হবে না। ইংল্যান্ডের মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলা সত্যিই কঠিন। বল অনেক বেশি স্যুইং করে। আইসিসি ইভেন্টে সেটা হয় না। আমার তো মনে হয় পরিবেশের থেকেও বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে খেলার জন্য বাড়তি চাপ থাকবে।’
দ্বাদশ আইপিএলে ব্যর্থ ভারতীয় দলের একনম্বর স্পিনার কুলদীপ যাদব। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে চায়নাম্যান বোলারটি মাত্র চারটি উইকেট পেয়েছিলেন। পরের দিকে তাঁকে ‘বিশ্রাম’ দেওয়া হয়েছিল। আইপিএলের ব্যর্থতা কুলদীপের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে। আর এক স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে বেশ ভালোই বল করেছিলেন। তবে আরসিবি সাফল্য পায়নি। তা সত্ত্বেও ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি বলছেন, ‘ভারতীয় দলের বোলিং আক্রমণের দুই স্তম্ভ কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চাহাল। আমরা দেখেছি কুলদীপ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কত ভালো সাফল্য পেয়েছে। তবে প্রত্যেকেরই খারাপ সময় যায়। এটা বরং ভালো যে কুলদীপের খারাপ সময়টা বিশ্বকাপে না হয়ে আইপিএলে গিয়েছে। আমার বিশ্বাস, ভুল শুধরে কুলদীপ বিশ্বকাপে দারুণ কামব্যাক করবে। যুজবেন্দ্র চাহালের দক্ষতা নিয়ে আমরা যথেষ্ট আশাবাদী। ওরা আমাদের বোলিংয়ের দুই স্তম্ভ।’ ২০১৭ থেকে এক সঙ্গে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছেন কুলদীব ও চাহাল। ৪১টি ম্যাচে চাহালের সংগ্রহ ৭২টি উইকেট। ৪৪টি ম্যাচে কুলদীপ নিয়েছেন ৮৭টি উইকেট। দুই রিস্ট স্পিনার ছাড়াও ভারতীয় বোলিং আছেন ইয়র্কার স্পেশালিস্ট যশপ্রীত বুমরাহ, ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট পেসার মহম্মদ সামি ও স্যুইং মাস্টার ভুবনেশ্বর কুমার।
এবার ভরা গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডে হবে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময় তীব্র জলসংকট দেখা গিয়েছিল ইংল্যান্ডে। এবার তেমন কোনও পূর্বাভাস না থাকলেও উইকেট শুকনো থাকবে। বল টার্ন করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চাহালের মতো রিস্ট স্পিনারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। স্পিন অলরাউন্ডার হিসাবে কেদার যাদব আছেন। আইপিএলে চোট পেলেও বিশ্বকাপের আগে তিনি পুরো ফিট। এই প্রসঙ্গে কোহলি বলেছেন, ‘আমরা জানি ইংল্যান্ডে কীরকম পিচে খেলতে হবে। সেই মতো বোলিং কম্বিনেশন গড়ে তোলা হয়েছে। পেস আক্রমণে যথেষ্ট বৈচিত্র রয়েছে। দু’জন পেস অলরাউন্ডারও রয়েছে দলে। দুই স্পিনারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এই বোলিং ইউনিট বিশ্বকাপে আমাদের অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে।’