নিজস্ব প্রতিবেদন: কাতার বিশ্বকাপের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। খালিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের কাজ প্রায় শেষ। এই স্টেডিয়ামটি এমনভাবে বানানো হচ্ছে যাতে স্টেডিয়ামের বাইরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থাকলেও স্টেডিয়ামের ভিতরের তাপমাত্রা থাকবে ২৩ ডিগ্রি। ২০২২ সালের নভেম্বর- ডিসেম্বরে প্রতিযোগিতাটি হবে। যদিও তখন সাধারণত তাপমাত্রা থাকে ৩০- ৪০ ডিগ্রি। কাতার বিশ্বকাপের সাংগঠনিক কাজকর্ম এগিয়ে গেলেও সংগঠকদের চিন্তা অন্যখানে। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ‘আরব ব্লক’ কাতারের প্রতি অর্থনৈতিক অবরোধ জারি রেখেছে। কাতার বিশ্বকাপের এখনও সাড়ে তিন বছর বাকি। তবুও এই অর্থনৈতিক অবরোধ এখন থেকেই ফুটবল মহলে চিন্তার বিষয়। কারণ গাল্ফ দেশগুলির সঙ্গে আকাশপথে কাতারের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব মসৃণ নয়। তাই তো কাতার বিশ্বকাপের সিইও নাসের আল খাতার সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন,‘অর্থনৈতিক অবরোধ সত্ত্বেও আমরা সফলভাবে কাতার বিশ্বকাপ সম্পন্ন করার সব ব্যবস্থা করছি। আমরা মনে করি সৌদি আরবের এই অর্থনৈতিক অবরোধ অনৈতিক। খেলা আর রাজনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবুও এই রাজনীতির জন্য দর্শকদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির বাইরে যে সমস্ত দেশ থেকে ফুটবলপ্রেমীরা এসেছিলেন তাদের মধ্যে ভারত ছিল দু’নম্বরে। এবার এশিয়ায় বিশ্বকাপ। ভারতীয় দল এশিয়া কাপে লড়াই করেছে। প্রাক বিশ্বকাপ এখনও শুরু করেনি ফিফা। তবে ভারত প্রথম ৩২ দেশের মধ্যে জায়গা করে নিক, বা না নিক আমরা কিন্তু ভারত থেকে প্রচুর ফুটবলপ্রেমী আসবে, এমনই আশা করছি। ভারত- চীন- সিঙ্গাপুর- মালয়েশিয়া দিয়ে সমুদ্রপথেও যাতে ফুটবলপ্রেমীরা আসতে পারেন সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এই দিকে সাংগঠনিক কমিটির তরফে একটি মাস্টার প্ল্যান নেওয়া হয়েছে। জলপথে সময় লাগলেও আলাদা আনন্দ আছে। ভারতীয়রা সিঙ্গাপুর- মালয়েশিয়ায় এসেও জলপথে কাতারে যেতে পারবেন। গ্রুপ টিকিটেরও ব্যবস্থা থাকবে। বিশ্বকাপ দেখার পাশাপাশি সিঙ্গাপুর- মালয়েশিয়ায় ভ্রমণের প্যাকেজও নিতে পারেন ফুটবলপ্রেমীরা।
উল্লেখ্য, সৌদি আরব এই অর্থনৈতিক অবরোধ আরও তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছে। কারণ আসন্ন ফিফা কংগ্রেসে ঠিক হবে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ৩২, না ৪৮ দলের হবে। ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফানতিনো মনপ্রাণে চাইছেন ৪৮টি দেশকে নিয়ে বিশ্বকাপ ২০২২ সালেই শুরু হোক। এর জন্য দুটি দেশে ফিফার নির্দিষ্ট করে দেওয়া আন্তর্জাতিক মানের চারটি স্টেডিয়াম চাই। ২০২২ বিশ্বকাপে টিম বাড়লে সৌদি আরব বিশ্বকাপ পাওয়ার সবথেকে বড় দাবিদার। অন্যদিকে কাতার চাইছে প্রথম এশিয়ান দেশ হিসাবে বিশ্বকাপ সংগঠন করার কৃতিত্ব নিতে। কাতারকে চাপে ফেলতেই তাই সৌদি আরবের বন্ধু দেশগুলি অর্থনৈতিক অবরোধ গড়ছে। আর এই ব্যাপার থেকে মুক্তি পেতে কাতার প্রতিযোগিতার সাড়ে তিন মাস আগে থেকেই সক্রিয়। যদিও অনেকে মনে করছেন বিশ্বকাপের মুখে সৌদি আরবের এই অর্থনৈতিক অবরোধ উঠে যাবে। কাতারের উপরে চাপ বাড়িয়ে নিজেদের দেশে বিশ্বকাপের কিছু ম্যাচ করতে চাইছে সৌদি আরবের যুবরাজ। যিনি নিজেও এএফসি’র শীর্ষ কর্তা।
নাসের আল খাতার জানিয়েছেন,‘কাতারের গরম নিয়ে বিশ্বতারকাদের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। স্টেডিয়াম ও প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে কুলিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।’ কাতারে প্রকা঩শ্যে মদবিক্রি ও মদ্যপান নিষিদ্ধ। এটা কাতারের বহু দিনের সংস্কৃতি। কিন্তু বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে কাতারে প্রচুর ইউরোপিয়ান আসবেন। যাঁদের কাছে বিয়ার খাওয়া নিষিদ্ধ। আসবেন ফিফা পার্টনারদের প্রতিনিধিরা, যাঁরা ইউরোপের কর্পোরেট জগতের লোক। বিশ্বকাপের সময়ে কি মদ বিক্রি হবে কাতারে? এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাতার বিশ্বকাপের সিইও নাসের আল খাতার জানান,‘২০১১ সালের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ হয়েছিল আমেদাবাদে। গুজরাতে মদ নিষিদ্ধ। সেখানেও অনেক ইউরোপিয়ান ছিলেন। আইসিসি সুচারুভাবেই ব্যাপারটি ম্যানেজ করেছিল। আমরাও সেই ভাবে এই ব্যাপারটি ম্যানেজ করতে চাইছি। কাতারে কিছু নির্দিষ্ট পাঁচতারা হোটেলে মদ বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেটা বাড়বে। তবে ব্রাজিল, জার্মানি বিশ্বকাপের মতো ফুটবলপ্রেমীরা রেস্তোরাঁয় বসে বিয়ার খেতে খেতে খেলা দেখবেন এমন হবে না।’
নাসের জানান,‘ বিশ্বকাপের জন্য আমরা সাত বছর ধরে দলটি তৈরি করছি। ২০১৯ এশিয়া কাপে দল দারুণ খেলেছে। ভালো ফল করতে আমরা আশাবাদী।’