পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
এই মুহূর্তে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ভরকেন্দ্র অবশ্যই বিরাট কোহলি। গত ছয় মাসে ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন ভারত অধিনায়ক। শেষ ১৬টি ইনিংসে ছয়টি সেঞ্চুরি সহ এক হাজার ৬৪ রান করেছেন ‘ভিকে’। বিশ্বকাপেও তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকবে ভারতীয় দল। সে কথাই আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন রিকি পন্টিং। তিনবার বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক এখন ভারতেই আছেন। আইপিএলে তাঁকে দেখা যাবে দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচের ভূমিকায়। একটি ইংরেজি দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিংবদন্তি এই অজি ব্যাটসম্যান বলেন, ‘বিরাটের ওয়ান ডে রেকর্ড অবিশ্বাস্য। মূলত তাঁর উপস্থিতির কারণেই ভারত এখন ভীষণ বিপজ্জনক দল হয়ে উঠেছে। আমি মনে করি, বিশ্বকাপে বিরাটের ব্যাট যদি জ্বলে ওঠে, তাহলে ভারতই চ্যাম্পিয়ন হবে।’ এবারের বিশ্বকাপে কোন চারটি দল সেমি-ফাইনালে খেলবে? পন্টিং জানিয়েছেন, ‘ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড শেষ চারে যাবে বলেই আমার ধারণা। তবে পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া যায় না। ওরাও চমক দেখাতে পারে।’
পন্টিং নিজে তিনবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। যার মধ্যে অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন দুটি। মাঠে কোহলির আক্রমণাত্মক মনোভাব নিজের অধিনায়কত্বের দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দেয় পন্টিংকে। তিনি বলেন, ‘আচার আচরণ ও মনোভাবের দিক থেকে কোহলি ও আমার মধ্যে অনেকটাই মিল রয়েছে। মাঠে ওর শরীরী ভাষা দেখে আমার নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের কথা মনে পড়ে যায়। আমরা দু’জনেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার। ব্যাটিংয়েও ওর সঙ্গে নিজের বেশকিছু মিল খুঁজে পেয়েছি আমি।’
একদিনের ক্রিকেটে ৩০ বছর বয়সী কোহলির রেকর্ড সত্যিই অবিশ্বাস্য। ২২৭ ম্যাচে ৫৯.৫৭ গড়ে ১০ হাজার ৮৪৩ রান করে ফেলেছেন তিনি। এত ম্যাচ খেলার পর কোহলির মতো ব্যাটিং গড় আর কারও নেই। ওয়ান ডে’তে কোহলির সেঞ্চুরি এখন ৪১টি। আর ৯টি সেঞ্চুরি করলেই তিনি ছাপিয়ে যাবেন শচীন তেন্ডুলকরের ৪৯টি সেঞ্চুরির রেকর্ডকেও। কোহলি যেভাবে সেঞ্চুরি করে যাচ্ছেন, তাতে একদিনের ক্রিকেটে সর্বাধিক শতরানের মালিক হতে আর খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না তাঁকে। আর সেই সূত্র ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে পুরানো একটা প্রশ্ন। কে সেরা— শচীন না কোহলি? পন্টিং সরাসরি কোনও জবাব দেননি। বরং ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেন, ‘শচীনের সঙ্গে কোহলির তুলনার সময় আসেনি। আমি মনে করি, বিরাটের কেরিয়ার শেষ হওয়ার আগে এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। কোহলি খেলা ছাড়ার পরেই এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা মিলবে। শচীন কিংবদন্তি, যে নিজের প্রজন্মে রীতিমতো রাজ করেছে বাইশ গজে। আবার কোহলিও এখন ধারাবাহিক ভাবে রান করছে। ওয়ান ডে’র মতো ওর টেস্ট গড়ও পঞ্চাশের ওপর। এটাই বুঝিয়ে দেয়, কোহলি কতবড় মাপের ব্যাটসম্যান। তবে মাথায় রাখতে হবে, শচীন কিন্তু এই গড় ২০০ টেস্ট পর্যন্ত ধরে রেখেছিল। তাই এই দুই গ্রেট ব্যাটসম্যানের তুলনার জন্য আরও কয়েক বছর আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।’
নিজে একজন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান হয়েও শচীন ও কোহলির বন্দনায় মুখর হয়েছেন পন্টিং। ওয়ান ডে’তে তৃতীয় সর্বাধিক রানের মালিক বলছেন, ‘শচীন টেকনিক্যালি দারণ নিখুঁত। আর সে কারণেই সে ভীষণ ধারাবাহিক ছিল। কোহলি হয়তো বেশি চমকপ্রদ। স্কয়ার অব দ্য উইকেটে সে বেশি শট খেলে থাকে। কিন্তু শচীনের প্রবণতা ছিল লাইনে থেকে ‘ভি-জোনে’ মধ্যে খেলার। ঠিক এই কারণেই ওদের মধ্যে তুলনা টানাটা এত কঠিন। আলাদা খেলোয়াড়, শট খেলার আলাদা জায়গা, প্রায় সবকিছুই আলাদা।’
পন্টিং সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স তখনই মধুর প্রতিপন্ন হয়, যখন তা দলের কাজে আসে। প্রাক্তন অজি অধিনায়কের কথায়, ‘আমার কেরিয়ারের দিকে তাকান। টেস্টে ৪১টি সেঞ্চুরি আর ১৩ হাজার রান করেও আমি পুলকিত নই। দলকে কত ম্যাচে জেতাতে পেরেছি সেটাই আমার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ১৬৮ টেস্ট খেলে ১১০টি ম্যাচ জিতেছি। এটাই আমার কাছে গর্বের ব্যাপার। বিরাট যেভাবে এগোচ্ছে তাতে তার প্রাপ্তির ভাণ্ডারও কম হবে না। হয়তো টেস্ট ক্রিকেটে ওর কাঙ্খিত লক্ষ্য পূর্ণ হবে না। তবে ওয়ান ডে’তে সে নিশ্চিতভাবেই পারবে। বিরাটের কাঁধে ভর করে ভারত বহু ম্যাচ জিতবে বলেই আমার বিশ্বাস।’
বিশ্বকাপে ভারতের চার নম্বর ব্যাটসম্যান কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত। তবে এ ব্যাপারে নিজের পছন্দ জানাতে দ্বিধা করেননি পন্টিং। উদীয়মান শ্রেয়াস আয়ারকে ওই পজিশনে দেখতে চান তিনি। এবারের আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক হলেন শ্রেয়াস। আর কোচ রিকি পন্টিং। তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত সিরিজেও ভারত চার নম্বরে অনেককে পরীক্ষা করেছে। অম্বাতি রায়াডুকে খেলানো হয়েছে। ঋষভ পন্থ, বিজয় শঙ্করকেও ওই পজিশনে খেলানো হয়েছে। আমার মনে হয়, শ্রেয়াস আয়ারকেও একবার দেখে নেওয়া যেতে পারত। ও খুব ভাল ব্যাটসম্যান। ঘরোয়া ক্রিকেটে এই মরশুমে সে দারুণ খেলেছে। তবে এখন দেখার, বিশ্বকাপে চার নম্বরে ভারত শেষ পর্যন্ত কাকে খেলায়। হয়তো লোকেশ রাহুলকেও ওরা সুযোগ দিতে পারে।’