রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
রাতুল ঘোষ : বুধবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রাউন্ড অব সিক্সটিনের প্রথম পর্বের ম্যাচে গত তিনবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে আক্রমণের ঝড়ে উড়িয়ে দিয়েও এফসি আয়াখস ১-২ গোলে পরাজয় বরণ করল। এক ঝাঁক অতি আকর্ষণীয় তরুণ প্রতিভাসমৃদ্ধ এই ডাচ ব্রিগেড ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে যেরকম দুরন্ত আক্রমণাত্মক হাই-প্রেসিং ফুটবল খেলেছে তা গোটা ফুটবল দুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য। তবে এটা ঘটনা, একটানা ৯০ মিনিট আক্রমণে ক্রমাগত লোক বাড়িয়ে এমন হাই-প্রেসিং ফুটবল খেলা বিশ্বের কোনও দলের পক্ষেই সম্ভব নয়। রিয়াল মাদ্রিদ ইউরোপের সবচেয়ে কুলীন দলগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রতিপক্ষের চাপ সহ্য করে তাঁরা ম্যাচ জিততে অভিজ্ঞ। সুযোগের অপেক্ষায় থেকে রিয়াল দ্বিতীয়ার্ধে মোক্ষম সময়ে ছোবল মেরে ম্যাচটা জিতে নিল। দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচ হবে রিয়ালের হোম গ্রাউন্ড সান্তিয়াগো বার্নাব্যু স্টেডিয়ামে। টুর্নামেন্টে তৃতীয় হলুদ কার্ড দেখে ওই ম্যাচে খেলতে পারবেন না রিয়াল রক্ষণের স্তম্ভ সের্গিও র্যামোস। তিনি রিয়ালের জার্সিতে ৬০০তম ম্যাচটি খেলে ফেললেন।
বুধবার আমস্টারডামের জোহান ক্রুয়েফ এরিনায় প্রথম মিনিট থেকেই ঝাঁঝালো, প্রেসিং ফুটবল খেলতে শুরু করে আয়াখস। শুরুতেই রিয়ালের লেফট ব্যাক সের্গিও রেগুইলনকে পরাস্ত করে ডান দিক থেকে আক্রমণ শানায় আয়াখস। রিয়ালের পেনাল্টি বক্সে সেই যে চাপ শুরু হল তা বিরতির আগে সামান্যতম শিথিল করেনি আয়াখস। দমবন্ধ করা সেই চাপের মুখে রিয়ালের দুই বিশ্বখ্যাত মিডফিল্ডার লুকা মডরিচ ও টনি ক্রুজও হাঁসফাঁস করছিলেন। ৯ মিনিটে আয়াখস প্রায় গোল করে ফেলেছিল। মাটি ফুঁড়ে নীচে নেমে অবধারিত গোল বাঁচান উইঙ্গার ভিনিসিয়াস জুনিয়র। আয়াখসের চার ফুটবলার হাকিম জিয়েচ, ডুসান ট্যাডিচ, ডেভিড নেরেস ও স্কোন ঘনঘন অ্যাটাকিং থার্ডে উঠে হামলা চালিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেন রিয়াল ডিফেন্স। মাঝে টপবক্সে একটি মোক্ষম সময়োচিত ট্যাকল করে বিপদ সামলান কাসেমিরো। আয়াখসের সম্মিলিত আক্রমণের সামনে দমবন্ধ করা অবস্থা হয় রিয়াল রক্ষণের। তুলনামূলকভাবে কম ভুল করে ঠান্ডা মাথায় আয়াখসের এই আক্রমণপ্রবাহ সামলানোর ক্ষেত্রে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সের্গিও র্যামোস। রিটার্ন ম্যাচে তিনি অবশ্য সাসপেন্ড থাকবেন।
রোনাল্ডো, জিদানোত্তর যুগে রিয়াল মাদ্রিদ এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক-আউট পর্বে খেলল বুধবার রাতে। প্রথমার্ধে তাঁদের রীতিমতো শিক্ষা দিয়ে গেল এরিক টেন হ্যাগের প্রশিক্ষণাধীন তরুণ আয়াখস ব্রিগেড। এই পর্বে টনি ক্রুজ মাত্র একবারই ড্রিবল করে বাঁ-দিকে অনবদ্য বল বাড়ান ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে। বল পাওয়া মাত্র ইনসাইড কাট করে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারটি গোল লক্ষ্য করে জোরালো শট নেন। যা ফিস্ট করে বাঁচান আয়াখস গোলরক্ষক। ভিনিসিয়াস বল পেয়েছেন কম। কিন্তু যখনই তাঁর কাছে বল এসেছে তখনই গতির বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন এই প্রতিভাশালী ব্রাজিলিয়ান। গ্যারেথ বেল তিনটি নির্বিষ শট ও হেড নিলেও নজর কাড়তে ব্যর্থ। বরং রিয়ালের রাইট ব্যাক ড্যানি কার্ভাহাল চারটি ক্ষেত্রে মোক্ষম ট্যাকল করে দলের পতন রোধ করেন। একটি ক্ষেত্রে রিয়াল গোলরক্ষক থিয়াবুট কোর্তোয়া কর্নারের বিনিময়ে নিশ্চিত গোল বাঁচান। ওই কর্নার থেকেই আয়াখসের নিকোলাস ট্যাগলিয়াফিকোর হেড কোর্তোয়াকে পরাস্ত করে গোলে প্রবেশ করে। কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ রেফারি দামির স্কোমিনা অফ সাইডের বাঁশি বাজিয়ে দেন। রিয়ালের কেউ গোল বাতিলের আবেদন করেননি। কিন্তু আয়াখসের আবেদনে সাড়া দিয়ে তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে প্রথমবার ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সাহায্য নিয়ে টিভি রিপ্লে দেখতে যান। প্রায় তিন মিনিট সময় নেন রেফারি। তার মতে বল গোলে ঢোকার সময় আয়াখসের ডুসান ট্যাডিচ অফ সাইডে ছিল। তার থেকেও বড় কথা হল রিয়াল গোলরক্ষক বলটা চাপড়ে সামনে ফেলেও রেহাই পেয়ে গেলেন।
মূলত অ্যাটাকিং থার্ডে ফিনিশিংয়ের অভাবে বুধবার মার খেল আয়াখস। ১৯৭০-৭২ সালের মধ্যে টানা তিনবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রিনাস মিশেলের প্রশিক্ষণে আয়াখস আমস্টারডাম। সেই দলের মধ্যমণি ছিলেন জোহান ক্রুয়েফ। এদিন তাঁর নামাঙ্কিত মাঠে আয়াখস আক্ষরিক অর্থেই ডাচ ফুটবলের অতীত গরিমা মনে করিয়ে দিল। প্রথম ২৫ মিনিটে তাঁরা চারটে গোলমুখী শট নিয়েছে। ২৭ মিনিটে ট্যাডিচের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৩৬ মিনিটে ওয়ান টাচে গড়া আক্রমণ থেকে জিয়েচ প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন। কোনও ক্রমে বাঁচান কোর্তোয়া। ৪১ মিনিটে ট্যাডিচ আবার বক্সে ঢুকে নাজেহাল করেন রিয়াল রক্ষণকে। তবে আরও সহজ সুযোগ ৫২ মিনিটে পেয়ে যান ডেভিড নেরেস। যা ফের বাঁচিয়ে দেন কোর্তোয়া। অবশেষে ৬০ মিনিটে গোলের খাতা খোলে রিয়াল মাদ্রিদ। রেগুইলানের লং এরিয়াল বল উড়ে আসে। এই প্রথম বিপক্ষে অ্যাটাকিং থার্ডে ওপেন স্পেস পেল রিয়াল। বাঁ-দিক থেকে কাট করে তিনজনকে ডজে ছিটকে ঝড়ের গতিতে ভিনিসিয়াস আয়াখস রক্ষণ ভেঙে ঢুকে অনবদ্য বল বাড়ান বেনজেমাকে। অতঃপর আমরা দেখলাম পোড় খাওয়া স্ট্রাইকার করিম বেনজেমার ক্লিনিকাল ফিনিশ। যা পরাস্ত করে আয়াখস গোলরক্ষক ওনানাকে (১-০)। এরপরেই গ্যারেথ বেলকে তুলে নিয়ে ভাসকুয়েজকে মাঠে নামান রিয়াল কোচ সোলারি। ৭৩ মিনিটে বেনজেমাকেও বিশ্রাম দিয়ে তিনি নামিয়ে দেন মার্কো অ্যাসেন্সিওকে। এই তাজা রক্তের যোগানে কাজ হয়। যদিও ৭৫ মিনিটে গোল শোধ করে আয়াখস। ডেভিড নেরেস বাঁ-দিক থেকে আক্রমণে উঠে পাস বাড়ান হাকিম জিয়েচকে। তাঁর নিখুঁত ফিনিশিং দেখেও ম্যাচ রেফারি প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ফের ভিডিও রিপ্লে পরীক্ষা করে গোলের বাঁশি বাজান (১-১)। অবশেষে ৮৭ মিনিটে ডান দিক থেকে একটি অসাধারণ ক্রস সেন্টার বিপক্ষের বক্সে ভাসিয়ে দেন ড্যানি কার্ভাহাল। গোলরক্ষক ওনানা গোল ছেড়ে বেরতে দেরি করায় মার্কো অ্যাসেন্সিও ব্যাক পোস্টে ফাঁকায় ফিনিশ করে দেন
(২-১)। পুনরায় ভিডিও রিপ্লে দেখে গোলের সংকেত দেন রেফারি।