পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বীরভূম ঝাড়খণ্ড সীমান্ত লাগোয়া রামপুরহাট-১ ব্লকের মাসড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ গ্রাম বৃষ্টিনির্ভর। মূলত আদিবাসীদের বসবাস। এছাড়া ভুঁইয়া সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। তাঁদের পূর্বপুরুষরা ঊনিশ শতকের শেষভাগে জঙ্গল কেটে পাথর ও কাঁকরময় এলাকায় চাষের গোড়াপত্তন করেছিলেন। সেই সময় ইংরেজ ও জমিদারদের খাজনার শোষণে এলাকার কৃষক জর্জরিত হতো। খাজনা মেটাতে না পেরে কৃষকদের জমি চলে যেত শোষকদের হাতে। ১৯২৫ সালে সুলঙ্গা গ্রামের ব্রজ মুর্মু ও ঠাকুরপুরা গ্রামের দুর্গা মুর্মু এলাকায় সুষ্ঠু চাষের ব্যবস্থা করে শোষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁরা ঝাড়খণ্ড থেকে আসা চিলা নদীর উপর একটি কাঁচা বাঁধ নির্মাণ করেন। এরপর ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৯০সালে তৎকালীন উপজাতি কল্যাণ সপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী বাঁধটি নির্মাণের জন্য ৭ লক্ষ ৩৮ হাজার ৭৪৭টাকা বরাদ্দ করে শিলান্যাস করেন। দুই প্রতিবাদী মুখ ব্রজ ও দুর্গার নামে বাঁধটির নামকরণ হয়। কাজও শুরু হয়। কিন্তু, অজানা কারণে কাজ সমাপ্ত না করেই মন্ত্রী মহেশ্বর মুর্মু বাঁধটির উদ্বোধন করেন। ফলে, বাঁধটি আদিবাসীদের কোনও কাজে আসেনি। ফের ১৯৯৬ সালে অতিরিক্ত ৯ লক্ষ ৭১৬৩টাকা বরাদ্দ করে জেলা আদিবাসী কল্যাণ দপ্তর। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় যেমন তেমন করে কাজ শেষ করে ওই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাসীবালা সহিস বাঁধটির উদ্বোধন করেন। ঠিক হয় ৮০ ফুট উঁচুতে জলাধারে বাঁধের জল ধরে রাখা হবে। প্রয়োজন মতো সেই জল চাষের কাজে সরবরাহ করা হবে। সেই মতো পাম্প ঘর ও জলাধার নির্মাণ হয়। এলাকার আদিবাসীদের অভিযোগ, দু’-দু’বার উদ্বোধনের পরও প্রকল্পটি কোনও কাজে আসেনি। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, উদ্বোধনের কিছুদিনের মধ্যেই ট্রান্সফর্মার সহ পাম্প ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। তারপর থেকে আর নতুন করে লাগানোর কোনও উদ্যোগ নেয়নি বাম সরকার। ফলে, প্রায় ৩০০ একর জমি পতিত হয়ে পড়ে রয়েছে। তবে, একদিন চালু হবে এই আশায় প্রতিবছর ব্রজদুর্গার স্মরণে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠান করে আসছেন গ্রামবাসীরা। বসে মেলাও।
বাম আমলে গ্রামবাসীরা মাঝেমধ্যেই বাঁধটি চালু করার জন্য জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনিক স্তরে দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু, প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি বলে অভিযোগ। অবশেষে এলাকার বিধায়ক তথা কৃষিমন্ত্রী বাঁধটি সংস্কারের পাশাপাশি এলাকায় সুষ্ঠু চাষের ব্যবস্থা করতে নবান্নে তদ্বির করেন। অবশেষে ২৯ বছর পর ব্রজ ও দুর্গার সেই স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে।
মন্ত্রী বলেন, ব্রজদুর্গার সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। তাঁদের নামে মাসড়া অঞ্চলে যে বাঁধটি আছে সেটা সংস্কারের জন্য সেচ দপ্তরের চিফ সেক্রেটারি নবীন প্রকাশের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি চিঠিপত্র করেছিলাম। সেচমন্ত্রীর সঙ্গেও এব্যাপারে কথাবার্তা বলি। অবশেষে তাঁরা বাঁধটি সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছেন। নভেম্বরে সেই কাজ শুরু হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, বাম আমলে দু’-দু’বার উদ্বোধন করেও তা চালু করতে পারেনি। যার ফলে কয়েক একর জমিতে চাষবাদ হতো না বললেই চলে।
এদিকে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হবে সেই খবর হাওয়ার গতিতে ছড়িয়ে পড়তেই আদিবাসী মহলে খুশির হাওয়া। এলাকার বাসিন্দা অম্বরেশ মুর্মু, রবিন মার্ডিরা বলেন, এটা শুধু একটা বাঁধ বললে ভুল হবে। ইংরেজ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে আদিবাসী আন্দোলনের প্রতীক এই বাঁধ। অবশেষে বহু বছর পর বাঁধটি চালু হতে চলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি কৃষিমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। উদ্বোধনের দিন ব্রজদুর্গার স্মরণে জাঁকজমক অনুষ্ঠানও করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।