গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সব্জি আড়তের মুনসির সঙ্গে কৃষকদের বকেয়া টাকা নিয়ে বিবাদ চলছিল। তা থেকেও এই ঘটনা হতে পারে। এছাড়া যাঁর জমিতে ওই কৃষক চাষ করতেন, জমি নিয়ে তাঁর সঙ্গেও বিবাদ চলছিল। সেই কারণটিও সামনে আসছে। এর পাশাপাশি উঠে আসছে স্থানীয় জমি হাঙরদের বিষয়টিও। এলাকা সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় এলাকার জমির বিস্তারিত তথ্য ছিল পরামনন্দবাবুর কাছে। তাই পথের কাঁটা সরাতে মাফিয়ারা তাঁকে সরিয়ে দিল কিনা সেই সম্ভাবনাও জোরালো হচ্ছে। তবে পুলিস খতিয়ে দেখছে, কেন এক সাধারণ চাষিকে মারতে এতবড় পরিকল্পনা করা হল। মৃতের মোবাইলের কললিস্ট ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্যও দেখা হচ্ছে।
এডিসিপি রাহুল দে বলেন, একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। সম্ভাব্য সব কারণকে খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ নতুনডি থেকে চা খেয়ে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পরমানন্দবাবু। বাড়ি ঢোকার কিছুটা আগেই রেললাইনের পাশে কেউ বা কারা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। ঘটনাস্থলেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। এরপরে স্থানীয় এক ছাত্র তাঁকে পড়ে থাকতে দেখে এলাকায় খবর দেয়। এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচটি বুলেটের ক্ষতচিহ্ন ছিল। দেহ থেকে তিনটি গুলি বের করা হয়েছে। ঘটনার পরই ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হীরাপুর থানায় বিক্ষোভ দেখান। এদিন সকাল থেকে এলাকা ছিল থমথমে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থানীয় মানুষের জটলা ছিল। ঘটনার তদন্তে নিয়ে আসা হয় পুলিস কুকুর। রেললাইনের ধার দিয়ে ৫০০ মিটার ছুটে একটি বটগাছের নীচে দাঁড়ায় প্রশিক্ষত কুকুর।
মৃতের ছেলে পঙ্কজ কুমার মাহাত ও ভাই রাজারাম মাহাত বলেন, আমরা পুলিসকে তিনটি নাম বলেছি। পঙ্কজবাবু বলেন, তাঁর মধ্যে একজন ওই এলাকাতেই সব্জি আড়তের মুন্সি ছিল। অভিযোগ, সে স্থানীয় ৩৪ জন চাষির কাছ থেকে সব্জি নিলেও প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা চাষিদের বাকি রেখেছে। টাকা না দেওয়া নিয়ে চাষিদের সঙ্গে বিবাদ চলছিল। ওই চাষিদের দাবি নিয়ে তদারকি করছিলেন পরমানন্দবাবু। তাই সেই কারণেও এই ঘটনা হতে পারে। এছাড়াও মৃত চাষি যার জমি চাষ করতেন, সে-ও সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। তাদের কাছ থেকে পরমানন্দবাবু ছ’কাঠা জমি কিনেছিলেন। সেখানে বাড়ি করতে গেলে জমি নিয়ে বিবাদ হয়। এমনকী এই ঘটনায় এক জমি মাফিয়ার নাম আসছে। মৃতের ছেলে বলেন, ওই জমি মাফিয়ার কাছ থেকে বাবা বেশকিছু টাকা পেতেন। আমরা তিনজনের নামেই থানায় অভিযোগ করেছি। যদিও পুলিসের দাবি, কোনও নির্দিষ্ট নামে নয়, অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী বলে অভিযোগ হয়েছে।
এলাকায় গিয়েও দেখা যায়, একরের পর একর কৃষিজমি ছোট ছোট প্রাচীর তুলে প্লট করে দিয়েছে জমি কারবারিরা। চাষিদের দাবি, এই এলাকার জমির উপর নজর পড়েছে জমি মাফিয়াদের। তারা কখনও অর্থের প্রলোভন দিয়ে, কখনও আবার ভয় দেখিয়ে জমি দখল করে নিচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না খাসজমিও। এদের কেউ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী, কেউ আবার লোহামাফিয়া। তাই বাধা দিলেই বিপদ। বছর খানেক আগে এক চাষি বাধা দেওয়ায় তাঁরও অকাল পরিণতি হয়েছিল। কৃষকদের দাবি, পরমানন্দবাবুর এই এলাকার জমিগুলির তথ্য নখদর্পণে ছিল। কৃষক মহলে তাঁর প্রভাবও ছিল। তাই তাঁকে সরিয়ে পথের কাঁটা পরিষ্কার হল কিনা সেই প্রশ্নও উঠছে। আরএকটি অংশের দাবি, তিনিও জমি নিয়ে কিছু কারবার করতেন। তা নিয়ে কোনও বিবাদের জেরে এই ঘটনা হতে পারে। তবে কারণ যাই হোক, কোনও একজন সাধারণ কৃষককে পাঁচ রাউন্ড গুলি করে খুন করা স্বাভাবিক ঘটনা নয়।