বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
দেশজুড়ে মন্দার প্রভাব গাড়ি শিল্প থেকে সিমেন্ট শিল্প সর্বত্রই পড়েছে। বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে বিক্রি প্রায় তলানিতে। এর প্রভাব পড়েছে ইস্পাত কারখানাগুলিতেও। সরকারি, বেসরকারি কোনও ইস্পাত কারখানাতেই উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা নেই। বিভিন্ন স্টক ইয়ার্ডে স্টিলের উৎপাদিত নানা সামগ্রী পড়ে থাকছে। একই অবস্থা সেলের অধীনে থাকা কারখানাগুলিও। প্রায় প্রতিটি কারখানাতেই স্টক ইয়ার্ডে উৎপাদিত সামগ্রী মজুত থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে না। তাই এবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উৎপাদন কমাচ্ছে তারা। এক ধাক্কায় ৩০ শতাংশ উৎপাদন কমানো হয়েছে। ডিএসপিতে রেলের হুইল অ্যাক্সিল বাদ দিলে মার্চেন্ট মিল্ট রড, চ্যানেল, অ্যাঙ্গেল সবকিছুর উৎপাদন কমানো হচ্ছে। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, এই অবস্থা শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বজুড়েই আর্থিক মন্দা চলছে। যার জেরে চীন ছাড়া সব দেশ শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে। সেই কারণেই ডিএসপিতেও উৎপাদন কমানো হচ্ছে। তবে বিরোধী দলের শ্রমিক নেতাদের দাবি, সরকার আর্থিক মন্দা কাটাতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলেই আরও শোচনীয়। আমাদের সামগ্রী বিদেশে বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছে। অথচ বিদেশের জিনিস আমাদের দেশে ঢুকে যাচ্ছে। আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিক ট্যাক্সও বিক্রি কমার অন্যতম কারণ।
এদিকে, ঘর পোড়া গোরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখে ডরায়, তেমনই এএসপি, সিএলডব্লুর বর্তমান পরিস্থিতি দেখে ডিএসপির কর্মীরাও এই উৎপাদন কমানো নিয়ে আতঙ্কিত। কারখানার ভিতরে বাইরে এনিয়ে চলছে জোর জল্পনা। বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, এখনও পুজোর বোনাস নিয়ে কোনও মিটিং হয়নি। ২০১৭ সাল থেকে বেতন বৃদ্ধির কথা থাকলেও ৭ সেপ্টেম্বর কর্তৃপক্ষ শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে মিটিং করে জানিয়ে দিয়েছে, এখনও কোম্পানি বেতন বৃদ্ধির মতো অবস্থায় নেই। তাই কর্মীদের মধ্যে যথেষ্ট হতাশা রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারেও। কারণ দুর্গাপুরের বাজার অনেকটাই নির্ভর করে এএসপি, ডিএসপির শ্রমিকদের বেতন ও পুজোর সময়ের বোনাসের উপর। একটি কারখানায় বিলগ্নিকরণের খাঁড়া, অন্য কারখানায় উৎপাদনে কাটছাঁটের কার্যত দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলজুড়ে হতাশা গ্রাস করছে।
আইএনটিইউসি সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনের দাবি, পরিস্থিতি বেশ খারাপ। শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা তখন জোর দিয়েছিলাম এই উৎপাদন কমালে যেন ব্লাস্ট ফার্নেন্স, অক্সিজেন ফার্নেন্স কনভাটার সহ নানা বড় মেশিন সংস্কারে জোর দেওয়া হয়, যাতে মন্দা কাটলেই ফের পুরোদমে আরও বেশি করে উৎপাদন করা যায়। আইএনটিইউসির জেলা সভাপতি বিকাশ ঘটক বলেন, প্রায় ৩০ শতাংশ উৎপাদন কমানো হয়েছে। কর্মীরা শঙ্কিত। সরকারের ভুল নীতির জন্য সবাইকে ভুগতে হচ্ছে। আইএনটিউসি সমর্থিত ডিএসপির শ্রমিক সংগঠন হিন্দুস্থান স্টিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, বিশ্বের মন্দার জেরেই এই ঘটনা। তবে এতে শ্রমিকরা খুবই চিন্তায় পড়েছে।
অন্যদিকে সিটু সমর্থিত হিন্দুস্থান স্টিল এমপ্লয়েজ ইউনিয়নের আহ্বায়ক বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যয় বলেন, উৎপাদন কমানো নিয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি। বিভিন্ন ট্যাক্সের কারণে চীন, ইউক্রেন থেকে যে দামে স্টিল আসছে আমরা সেই দামে স্টিল বিক্রি করতে পারছি না। স্বাভাবিকভাবেই বাজার পড়ে যাচ্ছে। কর্মীদের বোনাস, বেতন বৃদ্ধি নিয়ে কোনও সদর্থক প্রয়াস নেই।
তৃণমূলের শ্রমিক নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রের ভুল নীতির জন্যই শিল্পে বিভ্রাট চলছে। আমরা শ্রমিকদের পাশে রয়েছি।