সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: অণ্ডাল থানার চনচনি এলাকার নিখোঁজ মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের বৃদ্ধা মায়ের করুণ আর্তি, ছেলেধরা সন্দেহে আমার ছেলেকে কেউ মারবেন না। যে আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দেবেন তাঁকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে। এই আর্তিতে ছেলের ছবি সহ ফোন নম্বর দিয়ে বিভিন্ন এলাকায়, রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে পোস্টার লাগিয়েছে নিখোঁজ যুবকের পরিবার। দুর্গাপুরজুড়ে ছেলেধরার গুজবের জেরে আতঙ্কে অনেক শিশুর মা যেমন আতঙ্কিত তেমনই গুজব ছড়ানোয় আতঙ্কিত বহু মানসিক ভারসাম্যহীনদের পরিবারের লোকজন। কারণ বহু নিরীহ ভারসাম্যহীন যুবক সহ ভিক্ষাবৃত্তি করা পুরুষ-মহিলারা বারবার গণধোলাইয়ের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি তাঁদের পরিবারের। তাই এনিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন তাঁরা।
অন্যদিকে, পাণ্ডবেশ্বর ও কাঁকসা এলাকায় দুই পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র হঠাৎই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কাঁকসার নিখোঁজ থাকা ছাত্র রোশান কুমার সিনহার শনিবার বিকেলে সন্ধান মিলেছে বলে দাবি পরিবারের। এদিকে দুর্গাপুর মহকুমাজুড়ে ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে অধিকাংশ খুদে পড়ুয়ারা। ওই এলাকাগুলিতে স্থানীয় বাসিন্দারা ছেলেধরা সন্দেহে কয়েকদিন আগেই এক যুবক ও এক প্রৌঢ়কে গণপ্রহার দিয়ে পুলিসের হাতে তুলে দেয়। শুক্রবারও এক যুবককে কাঁকসা থানার পুলিসের হাতে তুলে দেয় এলাকাবাসী। এছাড়াও ফরিদপুর থানার গোগলা পঞ্চায়েত এলাকায় শনিবার দু’জন ভিক্ষাবৃত্তি করতে আসা মহিলাকে ছেলেধরা সন্দেহে এলাকাবাসী আটকে রেখে পুলিসের হাতে তুলে দেয়। আসানসোলের সালানপুরে ছেলে ধরা সন্দেহে যুবককে গণপিটুনি দেওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। এছাড়াও জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ সহ জেলার বিভিন্ন অংশে ছেলেধরার গুজবে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। পুলিস প্রশাসন ছেলেধরা গুজবের বিষয়ে এলাকায় এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে শিবির এবং মাইকিং করছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যাওয়া ছেলেধরার ভাইরাল ভিডিও এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
অণ্ডালের নিখোঁজ মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের বৃদ্ধা মা সুদামাদেবী বলেন, আমার বছর বাইশের ছেলের নাম মুকেশ মাহাত। সে কলেজে পড়াশোনা করতে করতে হঠাৎই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। গত দু’বছর আগে বাড়ি ছেড়ে হঠাৎই ভিন রাজ্যে চলে যায়। ফের ফিরে আসে। চলতি বছরে মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে বর্ধমানে চিকিৎসা করানো হয়। চলতি মাসের ৬ তারিখে ফের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। আমরা অণ্ডাল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। আমার সবার কাছে অনুরোধ, কেউ ওর সন্ধান পেলে দয়া করে ছেলেধরা সন্দেহে মেরে ফেলবেন না।
নিখোঁজ মুকেশের দাদা দীনেশ মাহাত বলেন, আসানসোল থেকে কলকাতা পর্যন্ত ও মহকুমার অধিকাংশ মোড়ে ভাইয়ের ছবি সহ ১০ হাজার টাকা পুরস্কার মূল্য ঘোষণা করে পোস্টার লাগিয়েছি। পরিবারের সকলে আতঙ্কে আছি। তাকে কেউ ছেলেধরা সন্দেহ করলে যদি কোনও অঘটন ঘটে যায় তা নিয়ে চিন্তিত আমরা।
অপরদিকে পাণ্ডবেশ্বর থানার কুমারডিহি এলাকায় চলতি মাসের ৭ তারিখে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্র নিখোঁজ হয়ে যায়। তার নাম আকাশ সাউ। পরিবারের লোকজন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে, শুক্রবার কাঁকসা থানার রেলপাড় এলাকার পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্র হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায়। যদিও এদিন বিকেলে বিহারের গয়া স্টেশন থেকে এক ব্যক্তি তার সন্ধান দিয়েছে বলে পরিবারের দাবি।