দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও ব্যবসা থেকে অর্থাগম যোগ। প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারেন। পুজো পাঠে মন। ... বিশদ
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নানুরে দলীয় কর্মী খুনের প্রতিবাদে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গত সোমবার থেকে বিজেপি এসপি অফিসের সামনে ধর্নায় বসে। শনিবার তাদের ধর্না ষষ্ঠ দিনে পড়েছে। বিজেপির জেলা নেতৃত্বের ঘোষণা মতো আজ, রবিবার পর্যন্ত ধর্না চলার কথা ছিল। কিন্তু, এদিন সকালে ধর্না শুরুর সময়ই ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক ও পুলিস গিয়ে তাঁদের উঠে যাওয়ার আবেদন করে। কিন্তু, বিজেপি নেতৃত্ব তাতে কান না দেওয়ায় ধর্নাস্থলে উত্তেজনা ছড়ায়। অতিরিক্ত পুলিস সুপার সুবিমল পালের নেতৃত্বে বিশাল পুলিসবাহিনী ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়। বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে পুলিসের কার্যত বচসা হয়ে যায়। পরে সেখানে থাকা বিজেপির জেলা নেতৃত্বকে পুলিস গ্রেপ্তার করে। জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল, কালোসোনা মণ্ডল সহ ৪২জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিজেপির নেতা-কর্মীদের সিউড়ি ও সদাইপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দলের অন্য কর্মী-সমর্থকরা প্রশাসন ভবনের সামনে ধর্নামঞ্চ থেকে প্রতিবাদ মিছিল করে বাসস্ট্যান্ডের দিকে যায়। সেই কর্মসূচিতে যোগ দেন বিজেপি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে রাজুবাবুর নেতৃত্বে বাসস্ট্যান্ডেই রাস্তা অবরোধ করা হয়।
অবরোধের জেরে সিউড়ি-দুবরাজপুর, সিউড়ি-বোলপুর ও সিউড়ি-রামপুরহাট রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীরা। পুলিস অবরোধ তুলতে জল কামান নিয়ে আসে। এছাড়া র্যা ফ, কমব্যাট ফোর্স সহ প্রচুর পুলিস আসে। এদিন বিজেপির এই আন্দোলন ঘিরে সিউড়িতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। মাইক নিয়ে অবরোধ তুলে নিতে পুলিসের তরফে আবেদন করা হয়। নইলে পুলিস আইন মোতাবেক কাজ করবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এমনকী, গ্রেপ্তার হওয়া বিজেপি নেতা-কর্মীদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
অন্যদিকে, সিউড়িতে দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এদিন বিকেলে ময়ূরেশ্বরের কোটাসুরে রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। যার জেরে সাঁইথিয়া-বহরমপুর রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর পুলিসের আশ্বাসে অবরোধমুক্ত হয় রাস্তা।
পরে গ্রেপ্তার হওয়া বিজেপির নেতা-কর্মীদের সাথে দেখা করতে সদাইপুর ও সিউড়ি থানায় যান বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ ও রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, এদিন পুলিস ১৪৪ধারা অমান্য করার অভিযোগে বিজেপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে।
রাজুবাবু বলেন, নানুরে তৃণমূলের হাতে স্বরূপ গড়াইয়ের খুনের ঘটনায় অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দলের সঙ্গে তারা বৈঠক করছে। তার প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভ করছিলাম। প্রতিবাদ করা যাবে না বলে ১৪৪ধারা জারি থাকার কথা বলে আমাদের উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত পাঁচদিন ধরে তাহলে কীভাবে চলল ধর্না? তিনি আরও বলেন, এদিন ধর্নামঞ্চ থেকে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। নইলে আগামী দিনে আমরা বীরভূম অচল করে দেব। এদিন মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, এদিন মৃত স্বরূপ গড়াইয়ের বাবা ভুবনেশ্বর গড়াই, স্ত্রী চায়না গড়াই ও দাদা অনুপ গড়াই ধর্না মঞ্চে যোগ দেওয়ার জন্য রামকৃষ্ণপুর থেকে রওনা দেন। তাঁদের দবি, মাঝ রাস্তায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী ও খুনের ঘটনায় জড়িতরা ধর্নামঞ্চে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য পিছু নেয়। সেই খবর জানতে পেরে আতঙ্কে তাঁরা বোলপুর মহকুমা পুলিস আধিকারিকের কার্যালয়ে এসে বিষয়টি জানান। পুলিস পরে স্বরূপ গড়াইয়ের পরিবারকে নিরাপত্তা দিয়ে রামকৃষ্ণপুর গ্রামে ফিরিয়ে দিয়ে আসে। মৃতের দাদা অনুপ গড়াই বলেন, অর্ধেক রাস্তা আসার পর হঠাৎ জানতে পারি তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাদের ধাওয়া করেছে। প্রাণভয়ে আমরা শান্তিনিকেতনে পুলিসের কাছে চলে আসি। পুলিস নিরাপত্তা দিয়ে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।
জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কেরিম খান বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও অবাস্তব অভিযোগ করছে মৃত বিজেপি কর্মীর পরিবার। ধর্না মঞ্চে গেলে পুলিস গ্রেপ্তার করবে সেই ভয়ে মিথ্যা অভিনয় করে কথা বলছে তারা।