গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
রাজ্যজুড়ে যেখানে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের তিক্ততার নানা ঘটনা বারবার সামনে এসে পড়ছে, সেখানে শনিবার এই অভাবনীয় ঘটনার সাক্ষী থাকল মল্লারপুরের ঘোষগ্রাম হাইস্কুল। প্রধান শিক্ষক বারীনকুমার ঘোষের বদলি রুখতে এদিন তাঁকে এভাবেই আটকে রেখে আরও চিন্তাভাবনার জন্য সময় নিতে বাধ্য করল স্কুলের পড়ুয়ারা।
বোলপুরের বাসিন্দা বারীনবাবু পাঁচবছর দু’মাস ধরে ঘোষগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। অবসর থেকে কয়েকটা বছর দূরে দাঁড়িয়ে স্থির করেছিলেন বাড়ির কাছাকাছি কোনও স্কুলে তিনি চলে যাবেন। সেইমতো বদলির আবেদন করেছিলেন। গত শুক্রবার ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশা হাইস্কুলে তাঁর বদলির নির্দেশ আসে। দিন কয়েকের মধ্যেই সেখানে কাজে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর। কিন্তু, ছাত্রছাত্রীদের মনের কথা তখনও হয়তো ঠিকমতো পড়তে পারেননি বারীনবাবু। বদলির খবর ছড়িয়ে পড়তেই বেঁকে বসে পড়ুয়ারা। এদিন সকালে তাই প্রধান শিক্ষককে কার্যত ঘেরাও করে বসে তারা। স্কুলের বোর্ড খুলে তাতে লেখে, ‘আপনাকে আমরা হৃদ মাঝারে রাখব, যেতে দেব না’। এই স্কুল ছেড়ে তাঁকে অন্যত্র যেতে দেওয়া হবে না, এই দাবি তোলেন অভিভাবকরাও।
স্কুলপডুয়া শান্তনু রায়, বাপ্পা কবিরাজ, রাহুল মির্ধারা বলে, দায়িত্ব নেওয়ার পরে এই স্কুলের হাল অনেকটাই পাল্টে দিয়েছিলেন হেডস্যার। বিশেষ করে স্কুলে একটা অনুশাসন তৈরি হয়েছে। নিয়মিত পঠনপাঠনের পরিবেশটা ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। সহমর্মিতার ছোঁয়া নিয়ে পড়ুয়াদের যে কোনও সমস্যায় পাশে দাঁড়ান প্রধান শিক্ষক। তিনি খুব কাছের মানুষের মতো সমস্যা শুনে প্রতিকার করেন। এমন কাছের মানুষকে কেউ ছাড়ে না কি? অভিভাবক আশিস মণ্ডল, বাদল চৌধুরী, বঙ্কিমচন্দ্র মণ্ডলরা বলেন, এমন মানুষকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পাওয়া একটা বড় প্রাপ্তি। বারীনবাবুর সময়ে স্কুলের পঠনপাঠনের পরিবেশের অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।
বারীনবাবু বলেন, প্রধান শিক্ষক হিসেবে পরিচালন সমিতি, সহ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সকলেরই সহযোগিতায় স্কুলের সুনামের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। তবে, এদিন যেভাবে ছাত্রছাত্রীরা তাঁর বদলি রুখতে তাঁকেই ঘেরাও করেছিলেন তাতে কার্যত আপ্লুত ওই প্রধান শিক্ষক। তাঁর কথায়, চেষ্টা করেছি সবসময় পড়ুয়াদের পাশে থাকতে, তাদের সমস্যা মেটাতে। কিন্তু, পড়ুয়ারা যেভাবে আমাকে স্কুলে থাকার অনুরোধ জানিয়েছে, কর্মজীবনে এটাই আমার সেরা প্রাপ্তি। তবে, ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসার দাবির মর্যাদা উনি রাখবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে কিছুদিন সময় চেয়ে নেন তিনি।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা ৪২৫। শিক্ষক রয়েছেন মাত্র সাতজন। তাঁদের মধ্যে ডিসেম্বরে গণিতের শিক্ষক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবসর নেবেন। এই অবস্থায় প্রধান শিক্ষক অন্যত্র বদলি হয়ে গেলে পাঁচজন শিক্ষক থাকবেন। তার মধ্যে একজন শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেবেন। চারজন শিক্ষক মিলে স্কুল চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা স্কুলের সহ শিক্ষক আদিত্যকুমার মণ্ডলের। এব্যাপারে জেলা স্কুল পরিদর্শক সুজিত সরকারের মোবাইল বন্ধ থাকায় প্রতিক্রিয়া মেলেনি।