ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
প্রসঙ্গত, জমিরক্ষার আন্দোলন মোকাবিলা করতে ১৪মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিসের গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। তাতে ১৪জন মারা যান। একজনের পরিচয় জানা যায়নি। আহত হন অনেকেই। ২০১১সালে রাজ্যে পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিসের গুলিতে নিহত এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। সেইমতো তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। এরপর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য নিহত ১৩জন এবং আহত ১৫৯জনের নাম পাঠানো হয় রাজ্যে। নিহতদের মাথাপিছু পাঁচ লক্ষ(মোট ৬৫ লক্ষ্য) এবং আহতদের জন্য এক লক্ষ টাকা করে মোট ১কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। আহতদের মধ্যে সাতজন টাকা নেননি। ফলে, ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা বিলি হয়, বাকি টাকা ফেরত যায়। এদিকে ওই তালিকা নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রদপ্তরে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একাধিকবার নন্দীগ্রাম গণহত্যা কাণ্ডে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সমেত রিপোর্ট তলব করেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ক্ষতিপূরণের তালিকা তলব করার জন্য নন্দীগ্রাম-১ ও ২এর বিডিওর কাছ থেকে মাস্টাররোল জমা করার নির্দেশ দেয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেই তালিকা সংগ্রহ করা হয়। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার রেভিনিউ মুন্সিখানার অফিসার ইনচার্জকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট তৈরির জন্য নির্দেশ দেন জেলাশাসক। সেই মতো রিপোর্ট তৈরির পর তা পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনায় আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সমেত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল। একাধিকবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এই ইস্যুতে চিঠি দিয়েছে। আমরা সেই রিপোর্ট পাঠিয়েছি।
নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব গড়ার জন্য ২০০৬ সালে ২২হাজার একর জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তখন এইচডিএ-র চেয়ারম্যান ছিলেন তমলুকের তৎকালীন সংসদ সদস্য লক্ষ্মণ শেঠ। নন্দীগ্রাম-১ ও ২ব্লকের শ’য়ে শ’য়ে ঘরবাড়ি, মন্দির, মসজিদ ও বিপুল পরিমাণ তিন ফসলি জমি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলনে নামেন স্থানীয়রা। পুলিস আটকাতে রাস্তা কেটে আন্দোলনে নামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। ২০০৭ সালে ৭জানুয়ারি প্রথম সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে গ্রামবাসীদের সংঘর্ষ হয়। তাতে তিনজন গ্রামবাসী মারা যান। তারপর ১৪মার্চ পুলিস সোনাচূড়া ও গোকুলনগরে গুলি চালায়। তাতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ২০০৭ সালের ১৪মার্চ পুলিসের গুলিতে আটজন মারা যান। বাকি ছ’জনের দেহে বুলেটের ক্ষত থাকলেও তা পুলিসের নয়। ময়না তদন্তের রিপোর্টে সেটা স্পষ্ট হয়েছিল। আর ১৪জনের মধ্যে একজনের পরিচয় সরকার আজও বের করতে পারেনি। আসলে তিনি মাওবাদী ছিলেন। নন্দীগ্রামে জমিরক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি শেখ সুপিয়ান ও নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আবু তাহের খান বলেন, বামফ্রন্ট সরকার বেছে বেছে শুধুমাত্র সিপিএমের লোকদেরই ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। এরপর মা-মাটি-মানুষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর নন্দীগ্রামে জমিরক্ষার আন্দোলনে পুলিসের গুলিতে নিহত এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। এনিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কীজন্য রিপোর্ট চেয়েছে, তা জানি না। তবে, প্রশাসনের কাছে যাবতীয় তথ্য আছে।