ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, আমাদের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্যসভানেত্রী দোলা সেনের উপস্থিতিতে ইসিএল সদর দপ্তরের সামনে শনিবার ধর্না আন্দোলন করা হবে। তারপর থেকে কয়লাশিল্পে একশো শতাংশ এফডিআইয়ের (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলন হবে। আমরা কোনওমতেই সরকারি সম্পত্তি বিদেশি পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিতে দেব না।
একইভাবে সরব হয়েছেন আসানসোল দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, পুনর্বাসন দিতে গিয়েও আমাদের জমি নিয়ে সমস্যায় ফেলা হচ্ছে। আমাদের খাসজমিতে পুনর্বাসন দিতে গেলে ইসিএল বলছে মাটির নীচে কয়লা আছে, দেওয়া যাবে না। তাদের কাছে জমি চাইলেও পর্যাপ্ত জমি দিচ্ছে না। অথচ ঝরিয়ার ক্ষেত্রে পুনর্বাসনের জন্য জমি দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা পুনর্বাসন পান।
২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ক্ষমতায় এসেই পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার অর্থনীতির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তারপরই বিভিন্ন সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণ নিয়ে সরকার পদক্ষেপ নেয়। এই তালিকায় থাকা ৪২টি সংস্থার মধ্যে সিএলডব্লু, এএসপিও রয়েছে। নতুন সরকার আসার তিনমাসের মধ্যেই প্রবল আর্থিক মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। বিভিন্ন শিল্পে ভাটা পড়েছে। এই পরিস্থিতিতেই দেশের কয়লা শিল্পাঞ্চলকে বিদেশি শিল্পপতিদের কাছে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের সিলমোহর পড়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কয়লাশিল্পে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক ও তাঁকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করে পেট চালানো মানুষজন। এবার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই জোরকদমে মাঠে নামছে তৃণমূল। এতদিন এনিয়ে খুব বড় আন্দোলন না হলেও ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ধর্নামঞ্চের মধ্যে দিয়ে লাগাতার আন্দোলন শুরু করতে চলেছে তারা। সাততোড়িয়ায় ইসিএলের সদর দপ্তরের সামনে মঞ্চ বেঁধে ধর্না কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসছেন দোলা সেন। পাশাপাশি জেলার মন্ত্রী, বিধায়ক থেকে শুরু করে প্রথম সারির নেতাদেরও থাকার কথা। ধর্না কর্মসূচির পর কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলন হবে বলে তৃণমূলের দাবি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা ভোটে যেভাবে শাসক দলের থেকে মুখ ফিরিয়েছে তৃণমূল। তাতে শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমেই নিজেদের ফের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার সুযোগ রয়েছে শাসক শিবিরের কাছে। লোকসভা ভোটে আসানসোল ও দুর্গাপুর দুটি লোকসভা কেন্দ্রেই বিজেপিকে বিপুল ভোটে জিতিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। যার একটা বড় অংশ কারখানার বা কোলিয়ারির শ্রমিক। কিন্তু, ভোটে জেতার পরপরই যেভাবে এএসপি ও সিএলডব্লুর বিলগ্নিকরণের পথে হেঁটেছে কেন্দ্র, তাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তার উপর কোলিয়ারিতে এফডিআই শ্রমিক মহলের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে, অনেকের মোহ ভঙ্গ হয়েছে বিজেপির প্রতি। এই সুযোগের ফয়দা তুলতে এখনও ব্যর্থ তৃণমূল। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে আন্দোলনের সেভাবে ঝাঁঝ নেই। এমনকী বহু শ্রমিক নেতার বেনিয়ম নিয়েও সাধারণ শ্রমিকরা বীতশ্রদ্ধ। এখন দেখার এই সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে কয়লাশিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ ঠেকাতে সর্বশক্তি দিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপাতে পারে কিনা তৃণমূল।
যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, লোকসভা ভোটের আগেও এসব নিয়ে অনেক কথা বলেছিল তৃণমূল। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের বাতিল করে দিয়েছে। এবার ওদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হবেন না। দেশবাসী জানেন, মোদিজি দেশের ভালোর জন্যই কাজ করছেন। আর যারা বড় বড় কথা বলছে, তাদের অধীনে থাকা দুর্গাপুরের ডিপিএল কারখানার বেহাল দশা কেন?