ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হীরাপুর থানার দামোদর নদ লাগোয়া ভালাডি গ্রামে শনিবার সন্ধ্যায় বাপ্পা শেখ নামে এক যুবক ঘুরতে দেখা যায়। তার আচরণে সন্দেহ হয় স্থানীয় লোকজনের। রাতের অন্ধকারে অপরিচিত যুবককে দেখে চোর সন্দেহে একপ্রস্ত গণপিটুনি দেয় সাধারণ মানুষ। পরে স্থানীয় কিছু লোকজনই তাঁকে উদ্ধার করে একটি দুর্গামন্দিরে আটকে রেখে পুলিসকে খবর দেয়। কিন্তু ঘটনার খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী জুনুট, সালুঞ্চি সহ বিভিন্ন গ্রামে। সেখান থেকে লোকজন দুর্গামন্দিরের সামনে জড়ো হতে থাকে। স্থানীয় কয়েকজনের দাবি চিনাকুড়ি থেকে লোক চলে আসে। হীরাপুর থানার পুলিস কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তারা দুর্গামন্দির থেকে যুবককে বের করতে গেলে জনতার ধস্তাধস্তি শুরু হয়। বহিরাগত যুবককে ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করার চেষ্টা চালায় উত্তেজিত জনতা। পুলিস ও সিভিক ভলান্টিয়াররা বাধা দিলে তাঁদের মারধর করা হয়। তিনজন সিভিক ভলান্টিয়ার জখম হন। পুলিসে গাড়ির পিছনের একটি কাঁচও ভাঙা হয়। পুলিসকে লক্ষ্য ইট ছোঁড়া হয় বলেও অভিযোগ। পরে হীরাপুর থানার ওসি সৌমেন্দ্রনাথ সিনহা বিশাল পুলিস বাহিনী নিয়ে গিয়ে তাদের উদ্ধার করার পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।
পরে এসিপি (পশ্চিম) শান্তব্রত চন্দ্রের নেতৃত্বে বিশাল পুলিস বাহিনী গিয়ে এলাকায় অভিযান চালায়। শনিবার ভোর রাতে পুলিসের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে বিকাশ ধীবর নামে স্থানীয় এক গ্রামবাসীকে গ্রেপ্তার করে। অন্যদিকে গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বহিরাগত যুবক বাপ্পা শেখকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দুটি পৃথক মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিসের গাড়ি ভাঙচুর ও মারধরের জন্য পুলিস একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকিরা পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। অন্যদিকে গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতেও একটি মামলা রুজু হয়েছে। তবে পুলিসের দাবি, বহিরাগত যুবকের চুরির উদ্দেশ্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তার কাছ থেকে একটি মাস্টার কি পাওয়া গিয়েছে।
এডিসিপি রাহুল দে বলেন, দু’জন গ্রেপ্তার হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
তবে, এই ঘটনাই প্রথম নয়, এর আগে জামুড়িয়া থানা এলাকায় একাধিক গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবারও জামুড়িয়া থানা এলাকায় এক যুবককে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছিল। জামুড়িয়ার শ্রীপুর ফাঁড়ির পুলিস তাকে উদ্ধার করতে গেলে সেখানেও পুলিসকে বিক্ষোভ দেখানো হয়। একইভাবে ওইদিন কুলটি থানার সাততোড়িয়া এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে এক যুবকে গণধোলাই দেওয়া হয়। এভাবেই জেলার নানা প্রান্তে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। যা জেলাবাসীর উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। রাজ্য সরকার যেখানে গণপিটুনি ঠেকাতে কড়া আইন প্রণয়ন করেছে, সেখানে কেন এই জেলায় এই ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। তিনি বলেন, গণপিটুনির ঘটনা কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না। মুখ্যমন্ত্রী এনিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। আমরা কড়া আইনও পাশ করিয়েছি।
স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলার প্রিয়ব্রত সরকার বলেন, কোনও অভিযোগ থাকলে আইনের সাহায্য নেওয়া উচিত। গণপিটুনি কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন কাউন্সিলার কপিল মাজি বলেন, পুলিস দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।