গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
গত লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে লাভপুর বিধানসভা এলাকা। বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল জয়লাভ করলেও তার অন্তর্গত লাভপুর বিধানসভায় মাত্র ৩৮০০ভোটের লিড পায় শাসকদল। তার থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় বিজেপি লাভপুরে শক্তি বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি লাভপুরে তৃণমূলের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বিজেপিতে যোগদান করার পর পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। শনিবার রাত ৯টা নাগাদ দ্বারকা পঞ্চায়েতের মীরবাঁধ গ্রামের বিজেপি নেতা ডালু শেখকে লক্ষ্য করে তাঁর বাড়ির সামনে থেকে বোমা মারে কয়েকজন দুষ্কৃতী। ঘটনাস্থলেই মারা যান ডালু শেখ। ডালু শেখের পরিবার ও বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের দাবি, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ডালু শেখকে খুন করেছে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল। তাদের দাবি, খুনের ঘটনার পিছনে রয়েছে নতুন ও পুরনো বিজেপি কর্মীদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। খুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বোলপুর মহকুমা পুলিস আধিকারিক অভিষেক রায়ের নেতৃত্বে বিরাট পুলিসবাহিনী যায়। বিজেপি সমর্থক ও গ্রামবাসীরা মিলে রাস্তার মধ্যে ডালু শেখের মৃতদেহ রেখে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিস মৃতদেহ তুলতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। তাঁরা দাবি করতে থাকেন, যতক্ষণ না প্রশাসন দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ততক্ষণ মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া যাবে না। প্রায় তিনঘণ্টা দেহ পড়ে থাকার পর পুলিস মৃতদেহ তুলতে গেলে তাদের লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়তে থাকেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, দেহ তোলার জন্য পুলিস লাঠিচার্জ করেছে।
রবিবার সকালেও মীরবাঁধ গ্রামে উত্তেজনা থাকায় পুলিস পিকেট বসানো হয়েছে। এদিন সকালে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দীর্ঘক্ষণ লাভপুর থানা ঘেরাও করেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। বেশ কিছুক্ষণ অবরুদ্ধ থাকার পর লাভপুর থানায় এসে পৌঁছন বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল। তাদের তরফে তৃণমূলের ১৩ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ গ্রহণ ও পুলিসের কাছে আশ্বাস পেয়ে থানা ঘেরাও উঠে যায়।
বীরভূমের পুলিস সুপার শ্যাম সিং বলেন, মীরবাঁধ গ্রামে মৃত ব্যক্তির নামে একাধিক অভিযোগ ছিল। এই ঘটনায় রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা খতিয়ে দেখছি। দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মৃতের স্ত্রী হাসিনা বিবি বলেন, স্বামী বিজেপিতে যোগদান করার পর থেকেই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব হুমকি দিচ্ছিল। তৃণমূলে নাম লেখানোর জন্য বারবার চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তা না শোনার জন্যই তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলা হল।
অন্যদিকে লাভপুর থানার হাতিয়া পঞ্চায়েতের হাতিয়া গ্রামে রবিবার সকাল থেকে বিজেপি সমর্থকদের বাড়ি লক্ষ্য করে ব্যাপক বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের তরফেও পাল্টা বিজেপির বিরুদ্ধে বোমা ছোঁড়ার অভিযোগ করা হয়। গ্রামবাসীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত শনিবার বিকেলে স্থানীয় খেলার মাঠে। সেখানে সামান্য কিছু কারণে এক বিজেপি সমর্থকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন শাসকদলের সমর্থকরা। বচসা গড়ায় হাতাহাতিতে। তারপরে থেকেই উত্তপ্ত ছিল পরিস্থিতি। বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, রবিবার সকাল থেকে তৃণমূল কর্মীরা পাশের গ্রাম থেকে লোকজন নিয়ে এসে বাড়ি ও রাস্তা লক্ষ্য করে ব্যাপক বোমাবাজি করে। তার সঙ্গে চলে ইটবৃষ্টি। ঘটনায় চারজন বিজেপি সমর্থক আহত হন। খবর পেয়ে সেখানেও যায় লাভপুর থানার পুলিস। এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর জন্য দু’জনকে আটক করা হয়। আপাতত পরিস্থিতি শান্ত হলেও এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।
দু’টি ঘটনা নিয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, তৃণমূল বুঝে গিয়েছে মানুষ তাদের সঙ্গে নেই। তাই বোমা বন্দুক নিয়ে দখল করতে নেমেছে। এদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিনহা বলেন, বিজেপি সমাজবিরোধী দুষ্কৃতীদের নিয়ে চলছে। তাই এধরনের ঘটনা হওয়া স্বাভাবিক। আমরা প্রশাসনকে বলব সঠিকভাবে তদন্ত করতে।