বাংলা নিউজ এজেন্সি: স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বুধবার বীরভূম জেলাজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য জোর তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। জারি করা হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা। এদিন সিউড়ি স্টেশনে জিআরপির তরফে তল্লাশি চালানো হয়। স্টেশনে থাকা যাত্রীদের ব্যাগ ও রেললাইনে তল্লাশি চালানো হয়। জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মেটাল ডিটেক্টার দিয়ে যাত্রীদের ব্যাগ ও রেললাইন পরীক্ষা করে দেখা হয়। অন্যবছর স্নিফার ডগ দিয়ে তল্লাশি চালানো হলেও এবার তার ব্যবস্থা ছিল না। জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, স্নিফার ডগ পাওয়া যায়নি বলেই বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে তল্লাশি অভিযান চালাতে হয়েছে।
বীরভূমের পুলিস সুপার শ্যাম সিং বলেন, রুটিনমাফিক জেলাজুড়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। তবে, সেরকম কিছু পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, বীরভূমের কয়েকটি এলাকা মাওবাদী অধ্যুষিত বলে পরিচিত। ঝাড়খণ্ড সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় ভীমগড়ের পাঁচরা সংলগ্ন এলাকায় বহুবছর আগে বিস্ফোরণে রেললাইন উড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই ঘটনায় তোলপাড় পড়ে যায়। এছাড়া রাজনগর, খয়রাশোল প্রভৃতি এলাকায় আগে মাওবাদী পোস্টারও প্রায়ই দেখা যেত। তারপর থেকেই যে কোনও ধরনের নাশকতা এড়াতে জিআরপি এবং আরপিএফের তরফে রেললাইন পরীক্ষা করে দেখা হয়। এমনকী, পুলিসের তরফেও একই অভিযান চালানো হয়।
এদিন পশ্চিম বর্ধমানের সীমান্ত বীরভূমের অন্তর্গত ভীমগড় স্টেশন থেকে দুবরাজপুর থানার সীমান্ত লাগোয়া শাল নদী পর্যন্ত রেলওয়ে ট্র্যাক পরীক্ষা করে দেখা হয়। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অণ্ডাল-সাঁইথিয়া রেললাইনে ওই তল্লাশি চালানো হয়। হিংলো নদীর ব্রিজের অংশও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। সন্দেহজনক বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হয়। সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী, অণ্ডাল পোস্টের রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্সের কর্মী ও খয়রাশোল থানার পুলিস যৌথ তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে।
অন্যদিকে, এদিন সকালে সিউড়িতে ময়ূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে তল্লাশি চালানো হয়। এছাড়া সিউড়ি-হাওড়া হুল এক্সপ্রেসেও একই পদ্ধতিতে তল্লাশি করে দেখেন জিআরপি-র কর্মীরা। এছাড়া রামপুরহাট স্টেশনের জিআরপি আইসি গৌতম মুখোপাধ্যায় এবং আরপিএফ ওসি গোপাল দত্ত দপ্তরের কর্মীদের নিয়ে রেলওয়ে ট্র্যাক ও যাত্রীদের ব্যাগ মেটাল ডিটেক্টার দিয়ে পরীক্ষা করেন। এছাড়া ডাউন মাতারা এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে যৌথ তল্লাশি চালানো হয়। রামপুরহাট স্টেশনটি ঝাড়খণ্ড সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় একাধিকবার সন্দেহজনক ঘটনার হদিশ পাওয়া যায়। এমনকী, তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র সহ দুস্কৃতীদের গ্রেপ্তারও করে রেল পুলিস। আগে রামপুরহাট স্টেশন ছিল মাওবাদীদের যাতায়াতের করিডর। তাই স্বাধীনতা দিবসের মুখে বাড়তি সতর্কতা নিতে এই তল্লাশি অভিযান রুটিনমাফিক চালানো হয়েছে বলে দাবি।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোলে এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। তারা নিয়মিত এলাকায় নজরদারি চালায়। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বাড়তি নজরদারি চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে, এদিন শান্তিনিকেতনেও জোর তল্লাশি চালানো হয়। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি কাল, শুক্রবার ভারতের উপরাস্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু শান্তিনিকেতনে আসছেন। উপরাস্ট্রপতি ওইদিন প্রথমে রবীন্দ্রভবনে শ্যামলী গৃহের দ্বারোদ্ঘাটন করবেন। তাই রবীন্দ্রভবন সংলগ্ন নাট্যঘর ও সংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। মেটাল ডিটেক্টার দিয়ে তল্লাশি চালায় বিশ্বভারতী নিযুক্ত বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীরা। এছাড়া উপরাস্ট্রপতি লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে যাবেন বলে সেখানেও তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।
বীরভূম জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, জেলার ১২টি থানা এলাকা ঝাড়খণ্ড সীমান্ত লাগোয়া রয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের আগে ঝাড়খণ্ডের সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় বিশেষ চেকিং করা হচ্ছে। অন্যান্য এলাকাতেও বাড়তি সতর্কতা রাখা হয়েছে। সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।