বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
রাজপরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রানি জানকীদেবীর সময়ে রাজবাড়িতে ঝুলন উৎসবের সূচনা হয়। রথযাত্রা, দুর্গাপুজো, রাস উৎসবের মতোই জানকীদেবী রাজবাড়িতে ধুমধামের সঙ্গে ঝুলনযাত্রারও প্রচলন করেন। রাজবাড়ির রথই বর্তমানে সর্বজনীন হয়ে গিয়ে মহিষাদলের রথ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। রথের পাশাপাশি পুরনো রাজবাড়ি অর্থাৎ রঙ্গিবসান প্যালেসের সামনে রাজারা দুর্গামণ্ডপ গড়ে তোলেন। বাংলার আটচালার আদলে সেখানে রয়েছে নাটমন্দির ও নহবতখানা। রাজবাড়ির বাইরে রয়েছে রাসমঞ্চ। সুদৃশ্য কারুকাজ করা ইটের তৈরি সেই রাসমঞ্চ কয়েক বছর আগে ভেঙে পড়েছে। একইভাবে ঝুলনের জন্য রাজবাড়ির মদনগোপালজিউর মূল মন্দিরে ঢোকার মুখে বাঁদিকে আলাদা ঝুলন মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে।
রাজ এস্টেটের কর্মী স্বপন চক্রবর্তী বলেন, ২৫-৩০বছর আগেও ঝুলনযাত্রা উপলক্ষে রাজবাড়ির পাশে মেলা বসত। বহু জায়গা থেকে মানুষজন আসতেন। সন্ধ্যায় কীর্তনগান, রাধাকৃষ্ণের পালাগান হত। বাইরে থেকে কীর্তনীয়ারা আসতেন। এবছর ঝুলনে রাজা হরপ্রসাদ গর্গ ও শঙ্করপ্রসাদ গর্গ উৎসবের সূচনায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আগের মতো সেই ধুমধাম করে ঝুলনযাত্রা হয় না। তবে সমস্ত রীতিনীতি মানা হয়। রবিবার থেকে উৎসব শুরু হয়েছে। প্রতিদিন রাধাকৃষ্ণকে নানা বেশে সাজানো হয় এবং মূল মন্দির থেকে দেবতার মূর্তি বের করে এনে ঝুলন মন্দিরে সুসজ্জিত দোলনায় সাজানো হয়।
এখন জৌলুস না থাকলেও ঐতিহ্যের টানে ঝুলন দেখতে আসেন মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের আত্মীয়দের নিয়ে প্রতিদিন বিকেলে বা সন্ধেবেলা রাজবাড়িতে ঝুলন দেখতে যাবেন, এটাই মহিষাদলের রীতি। বৃহস্পতিবার ঝুলন পূর্ণিমা পর্যন্ত এই উৎসব চলবে। যাঁরা রাজবাড়ির আমন্ত্রিত অতিথি, তাঁদের গাওয়া ঘিয়ে তৈরি পোলাও ভোগ দেওয়ার রীতি রয়েছে। মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তিলককুমার চক্রবর্তী বলেন, শ্রাবণ মাসে যাঁরা মহিষাদল বেড়াতে আসেন তাঁদের কাছে রাজবাড়ির ঝুলন খুবই আকর্ষণীয় বিষয়। রাজবাড়ির এই ঐতিহ্যের উৎসবকে মহিষাদলের পর্যটনের প্যাকেজে যুক্ত করার জন্য রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। মহিষাদলের সংস্কৃতিকর্মী শশাঙ্কশেখর মাইতি বলেন, আজ থেকে ৩০-৩৫বছর আগে শুধু এই ঝুলনের সময় রাজবাড়িতে ঢোকার অনুমতি মিলত। আমরা ছাত্রাবস্থায় তখন রাজবাড়ি ও ঝুলনযাত্রা দেখতে দল বেঁধে যেতাম। তখন রাজবাড়ির বাইরে হিজলি টাইডাল ক্যানেল ও রাজবাড়ির পরিখার পাশে স্থানীয় হস্তশিল্পীরা নানা ধরনের সামগ্রী নিয়ে দোকান বসাতেন।