বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপীনাথের বাড়িতে স্ত্রী সহ এক ছেলে, এক মেয়ে ও তাঁর মা, বাবা, ভাই রয়েছেন। গোপীনাথ বাড়ির বড় ছেলে। তিনি পেশায় রাঁধুনির হেল্পার ছিলেন। মাঝেমাঝেই গ্রামের বাইরে কাজে যেতেন। এদিন সকালে গ্রামের শেষ প্রান্তে জমিতে তাঁর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন বাসিন্দারা। মৃতদেহের উর্দ্ধাংশ মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় ছিল। নিম্নাংশে কালো রঙের ফুলপ্যান্ট ছিল। মুখও মাটিতে চাপা ছিল। পরিবারের দাবি, সোমবার রাত ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে দোকান যাওয়ার নাম করে তিনি বেরিয়েছিলেন। পরে আর ফেরেননি। রাতে খোঁজাখুঁজির পর সকালে গ্রামের প্রান্তে জমিতে মৃতদেহ দেখে বাসিন্দারা থানায় খবর দেন। স্থানীয় সদাইপুর থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিস ঘটনাস্থলে মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য যায়। কিন্তু খুনের অভিযোগ তুলে দোষীদের শাস্তির দাবিতে বাসিন্দারা পুলিসকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। পাশাপাশি মৃতদেহ তুলতেও বাধা দেওয়া হয়। এমনকী, পুলিস কুকুরের দাবিও জানানো হয়। প্রায় ৬ ঘণ্টা পর অবশেষে পুলিস খুনের কিনারা করতে পারায় মৃতদেহ তুলতে অনুমতি দেন বাসিন্দারা।
গোপীনাথের মৃতদেহ জমিতে উদ্ধারের ঘটনায় পারুলিয়া পঞ্চায়েতের করমকাল গ্রামের পার্শ্ববর্তী রাজগঞ্জ, হাজরাপুর, জামথলিয়া প্রভৃতি গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলঘেরা করমকাল গ্রামের বাসিন্দা অনুপ নন্দী, প্রবীর ঘোষ বলেন, গোপীনাথ খুব ভালো ছেলে ছিল। গ্রামে কারও সাতে-পাঁচে থাকত না। সব মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। তাঁকে নৃসংশভাবে খুন করায় আমরা দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রামের মানুষজন প্রথমদিকে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা না বললেও পরে পুলিস অভিযুক্ত স্ত্রী ও তার প্রেমিককে গ্রেপ্তার করায় ঘটনার কিনারা হয়ে যায়। এছাড়া বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই জানতেন বলে দাবি করেন।
মৃতের মা বুলু পাতর বলেন, বউমার সঙ্গে প্রতিবেশী বচ্চন গল্প করত। সেই নিয়ে মাঝেমাঝে ঝামেলা হতো। সোমবার রাতে বাড়ি থেকে দোকান যাওয়ার নাম করে বেরিয়েছিল। তারপর আর ফেরেনি। এদিন সকালে জমিতে মৃতদেহ পাওয়া গেল।
পুলিসের দাবি, মৃতের স্ত্রী শ্যামলীর বাপের বাড়ি বীরভূম জেলারই ঝাড়খণ্ড সীমান্ত লাগোয়া একটি গ্রামে। করমকাল গ্রামে আত্মীয় থাকায় মাঝেমাঝেই সে এখানে আসত। সেইসময় থেকে তার সঙ্গে বচ্চনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে অবশ্য প্রতিবেশী গোপীনাথের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পরও তারা সম্পর্ক রেখেছিল। সেই ঘটনা গোপীনাথ জানতে পারায় মাঝেমাঝে বাড়িতে অশান্তি হয়। গত রবিবারও বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী-র মধ্যে তুমুল ঝামেলা হয়। এরপর সোমবার রাতে গোপীনাথ ও বচ্চন একসঙ্গে গ্রামের শেষে জমিতে মদ খেতে যায়। সেখানেই বচ্চন গোপীনাথকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। এমনকী, মৃতদেহ মাটি চাপা দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই কাজ সম্পূর্ণ না করেই অভিযুক্ত পালিয়ে যায় বলে পুলিস জেরা করে জানতে পেরেছে।
এদিন সকালে মৃতদেহ দেখতে পেলে গ্রামে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় সুযোগ বুঝে বচ্চন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিস করমকাল গ্রাম লাগোয় জঙ্গল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে বাড়ি থেকে মৃতের স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিস জানিয়েছে, একটি হাঁসুয়া উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া রক্তের দাগ লেগে থাকা অভিযুক্তের একটি হলুদ রঙের গেঞ্জি, স্ক্রিন ফেটে যাওয়া একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের বাবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। যদিও বচ্চনের মা বলেন, প্রতিবেশী হওয়ায় ওদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। বাড়িতেও যাতায়াত ছিল। বাকি কিছু জানা নেই।