বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে কাটোয়ার সুদপুর পঞ্চায়েতের বিজয়নগরে সুজিত মণ্ডলকে প্রথমে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করার ঘটনায় পুলিস শুক্রবার মৃতের স্ত্রী শম্পা মণ্ডল ও তার প্রেমিক নয়ন পালকে গ্রেপ্তার করে। হৃদরোগে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রথমে শম্পা রটানোর চেষ্টা করেছিল। তার ছেলে ও মেয়েকেও সে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ছিল। কিন্তু, তারা পুরো বিষয়টি দেখে ফেলায় কার্যত পুরো প্ল্যান ভেস্তে যায়। মৃতের মেয়ে তার বাবাকে খুনের কথা পরিবারের সকলের কাছে খুলে বলে। নয়ন সুজিতের ছেলে মেয়েদের পড়াত। মৃতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস শম্পা ও নয়নকে গ্রেপ্তার করে।
এদিন শম্পা দাবি করে, নয়ন স্বামীকে খুন করতে চায়নি। সে দু’বার ফোন করে ডাকলেও নয়ন ওই রাতে তাদের বাড়ি আসেনি। ফের ভোর ৪টে নাগাদ সে আবার ফোন করে নয়নকে ডাকে। তারপর নয়ন এসে দেখে সুজিত মেঝেতে শুয়ে আছে। নয়নকে সুজিতের মুখে বালিশ চাপা দিতে বাধ্য করায় শম্পা। এরপর সে নিজে স্বামীর গলা টিপে খুন করে। শুধু তাই নয়, নয়নকে বাঁচাতে শম্পা পুলিসের কাছে দাবি করে, ঘুমের ওষুধ সেই কিনে আনে। কিন্তু, পুলিস কোনও কথা না শুনে নয়নকে নিয়ে সোজা ওষুধের দোকানে চলে যায়। তারপরই আসল সত্যি বেরিয়ে আসে।
তদন্তকারীরা দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, ঘটনার ১৫দিন আগেই তারা এই খুন করার পরিকল্পনা করেছিল। এদিন শম্পা ও নয়নের ফোন, জুতো, খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত বালিশ ও ওষুধ বাজেয়াপ্ত করে পুলিস।
এদিকে, এদিন বিজয়নগর গ্রামে ধৃতদের দেখতে কার্যত ভিড় জমে যায়। এদিন নয়নের মা স্মৃতিরেখা পাল ছেলেকে দেখেই তার গালে কষে চড় মারেন। এদিন নয়ন বলে, আমার সঙ্গে শম্পার সম্পর্ক থাকলেও আমি খুন করতে চাইনি। আমাকে জোর করে খুন করতে বাধ্য করায় শম্পা। আমি যখন ভোরের দিকে আসি তখন সুজিত আধমরা অবস্থায় ছিল। তারপর আমাকে তার মুখে বালিশ চেপে ধরতে বলে শম্পা।
পথের কাঁটা সুজিতকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে নতুন ভাবে সংসার করতে চেয়েছিল দু’জনে। মাস্টার ডিগ্রি করা নয়ন স্কুল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষকের চাকরি জোটাতে চেয়েছিল। তারপর তারা সুখে সংসার করতে চেয়েছিল। কিন্তু, তারা ধরা পড়ে যাওয়ায় সবকিছু শেষ হয়ে গেল। পুলিসের কাছে তারা আফশোসের সুরে একথা জানিয়েছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনের দিন নয়ন সুজিতের বাড়ি দু’বার আসে। সেই সময় সে শম্পাকে ঘুমের ওষুধ কিনে দিয়ে গিয়েছিল। আর রাতে কীভাবে সবকিছু হবে তার পরিকল্পনাও করে গিয়েছিল। এরপর সুজিত ও তার দুই ছেলে মেয়েকে ভাতের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়েছিল শম্পা। কিছুক্ষণ পর ছেলে মেয়ে শম্পার সঙ্গে খাটে ও সুজিত ঘরের মেঝেতে বেহুঁশ হয়ে পড়ে। সেই সময় শম্পা নয়নকে বহুবার ফোন করলেও সে আসেনি। ভোরের দিকে নয়ন আসায় দরজা খুলে দেয় শম্পাই। তারপর দু’জনে মিলে সুজিতকে মেরে ফেলে। শম্পা দাবি করে, দিনের পর দিন সুজিত মদ্যপ অবস্থায় এসে আমার উপর অত্যাচার করত বলেই আমি ওকে মেরেছি। আমি জানি আমার ফাঁসি হবে। কিন্তু, আমার আর কিছু করার ছিল না।
পুনর্নির্মাণের পর ফিরে যাওয়া সময় শম্পা নয়নের কানের কাছে বলে, আর হয়তো দু’জনের দেখা হবে না। ভালো থেকো। এরপর নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনায় চোখের জল মুছতে মুছতে দু’জনেই পুলিসের দু’টো আলাদা গাড়িতে ওঠে।