পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত এলাকার অঞ্চল সভাপতি ও গ্রামের বুথ সভাপতি ও তাঁদের অনুগামীদের মধ্যেই টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। যদিও অঞ্চল সভাপতির অনুগামীরা অভিযোগ করেছেন, গ্রামের বুথ সভাপতি বিজেপির সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছেন। সেই অভিযোগ উড়িয়ে বুথ সভাপতি পাল্টা দাবি করেছেন, এলাকার কাটমানি আন্দোলন চাপা দিতে বিজেপিকে সামনে রেখে পুরনো তৃণমূল কর্মীদের হেনস্তা করছেন। তবে শাসকদলের ইলামবাজার ব্লক নেতৃত্ব এই ঘটনাকে গ্রাম্য বিবাদ বলে জানিয়েছেন। পুলিস জানিয়েছে, এব্যাপারে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার রাত থেকে ইলামবাজার ব্লকের ধরমপুর পঞ্চায়েতের শুনমুনি গ্রাম তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ধরমপুর অঞ্চল সভাপতি শেখ নাজির ও শুনমুনি গ্রামের বুথ সভাপতি সামসুজ্জোহা মণ্ডলের অনুগামীদের মধ্যে এলাকার দখলদারি নিয়ে সমস্যা দীর্ঘদিনের। ওইদিন গ্রামের তিনমাথা মোড়ে দু’পক্ষের বচসা শুরু হয়। বচসা গড়ায় মারামারিতে। সংঘর্ষের জেরে উভয়পক্ষের আটজন জখম হন। তাঁদের প্রথমে ইলামবাজার প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁদের বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জখমদের প্রত্যেকের অবস্থাই স্থিতিশীল। অশান্তির খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যায় ইলামবাজার থানার পুলিস। তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নতুন করে পরিস্থিতি যাতে উত্তপ্ত না হয়ে ওঠে সেজন্য বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গ্রামে পুলিস মোতায়েন ছিল। গ্রামে চাপা উত্তেজনা রয়েছে।
ধরমপুর অঞ্চল সভাপতির অনুগামীদের দাবি, বুথ সভাপতি ও পঞ্চায়েত সদস্যা তৃণমূলে থাকলেও গোপনে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গ্রামে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন। এছাড়াও গ্রাম পঞ্চায়েতের নানা প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। তা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলেই চড়াও হয়ে মারধর করছে। অন্যদিকে, গ্রামের বুথ সভাপতি তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তাঁদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোটা রাজ্যে কাটমানি আন্দোলন যেভাবে চলছে তার জের ধরমপুর গ্রামেও পড়তে পারে। তা ভেবে অঞ্চল সভাপতি ও তাঁর অনুগামীরা বিজেপির সঙ্গে আপস করে পুরনো তৃণমূল কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও ইলামবাজার ব্লকের তৃণমূল নেতৃত্ব গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়ে এই ঘটনাকে গ্রামের পারিবারিক বিবাদ বলে জানিয়েছে।
গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পঞ্চায়েতের কাজে কার দায়িত্ব বেশি থাকবে। কাদের হাতে থাকবে এলাকার ক্ষমতার রাশ তা নিয়েই মূলত সমস্যা তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। এছাড়াও গ্রামের পাশেই একটি বেসরকারি মুরগির খাবার তৈরির কারখানা রয়েছে। সেখানে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে কার জোর বেশি থাকবে ও কারখানার শ্রমিকদের সংগঠনের দায়িত্ব কে সামলাবেন তা নিয়ে প্রায়শই গ্রামে অশান্তি হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭সালের নভেম্বর মাসে কারখানায় ক্ষমতার রাশ ধরে রাখা কেন্দ্র করে শুনমুনি গ্রামের এক ব্যক্তিকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল।
ধরমপুর অঞ্চল সভাপতি শেখ নাজিরের অনুগামী মান্নান শেখের স্ত্রী রহিমা বিবি বলেন, গ্রামের বুথ সভাপতি ও পঞ্চায়েত সদস্যরা মিলে প্রতিদিন অশান্তি করছে। তৃণমূল দলে থাকলেও বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে ওরা।
শুনমুনি গ্রামের বুথ সভাপতি অনুগামী গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা রোকেয়া বিবি বলেন, গ্রামের তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা। অঞ্চল সভাপতি ও তাঁর অনুগামীরা পঞ্চায়েতের নানা প্রকল্পের টাকা আত্মসাত করছেন। তা নিয়ে প্রতিবাদ করলে বা অভিযোগ জানালে অশান্তি করছে ওরা।
বুথ সভাপতি সামসুজ্জোহা মণ্ডল বলেন, পুরনো তৃণমূল কর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে অঞ্চল সভাপতি গুরুত্বহীন কিছু কর্মী ও সিপিএম থেকে আসা লোকজনকে নিয়ে ঘুরছেন ও তাঁদের গুরুত্ব দিচ্ছেন। এব্যপারে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। অঞ্চল সভাপতি শেখ নাজির বলেন, এব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমকে কিছু বলব না। যা বলার ব্লক সভাপতি বলবেন।
তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি ফজলুল রহমান বলেন, শুনমুনি গ্রামে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। দু’টি পরিবারের মধ্যে বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। যা ধীরে ধীরে গ্রামে ছড়িয়ে যায়। পুলিস ও প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।