পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
আধিকারিকদের দাবি, বছরে ৮০কোটি ডিম উৎপাদন হলে জেলার চাহিদা মিটে যাবে। টার্গেট পূরণ হবেই। তা হলে বাইরের রাজ্য থেকে ডিম আনার প্রয়োজন হবে না। উল্টে অতিরিক্ত ডিম অন্য জেলায় পাঠানো যাবে। গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা ডিম উৎপাদন করে স্বনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারবে। এখন জেলায় বছরে ৫০কোটি ডিম উৎপাদন হয়। আগের তুলনায় উৎপাদনের পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। ২০১৮-’১৯ আর্থিক বর্ষের আগে ৪৬কোটি ডিম উৎপাদন হতো। ধাপে ধাপে তা বেড়েছে। আগামীদিনে তা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জেলায় বিভিন্ন ধরনের মুরগি চাষের পরিমাণও আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছে। বেকার যুবকদের পাশাপাশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিও ফার্ম তৈরি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। ২০১৮-’১৯ আর্থিক বর্ষে জেলায় ৮লক্ষ মুরগির ছানা বিলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জুন মাস থেকে তা বিলিও শুরু হয়েছে। প্রতিটি ব্লকেই মুরগি বিলি করা হবে। মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তরের আধিকারিক তারাশঙ্কর পান বলেন, জেলায় আরও বেশি ডিম উৎপাদন বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। সেকারণে জঙ্গিপুর, বড়ঞা এবং ডোমকলে তিনটি বাণিজ্যিক ফার্মও তৈরি করা হচ্ছে। ওই ফার্মগুলিতে ডিম দেওয়া মুরগি থাকবে।
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদ জেলার গ্রামীণ এলাকার অনেকেই হাঁস, মুরগি চাষের উপর নির্ভরশীল। অনেকে বড় ফার্ম তৈরি না করেও বাড়িতেও মুরগি চাষ করেন। রাজ্য সরকার জেলার বাসিন্দাদের হাঁস, মুরগি চাষে উৎসাহ দেওয়ার পর থেকে চাষের পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ভর্তুকি দিয়েও এই চাষ করানো হচ্ছে। এক আধিকারিক বলেন, মাংসের জন্য ব্রয়লার বহু জায়গাতেই চাষ হয়। এই চাষ যথেষ্টই লাভজনক। ৪৫দিনের মধ্যেই মুরগি বড় হয়ে ওঠে। তা বাজারে বিক্রি করে লাভ পাওয়া যায়। বহু দিন ধরেই বিভিন্ন ধরনের ব্রয়লার জেলায় চাষ হয়ে আসছে। কিন্তু, সেই তুলনায় এতদিন ডিম উৎপাদনের জন্য মুরগি চাষ সেভাবে বাড়েনি। তবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর ডিম উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু প্রজাতির মুরগি মাসের বেশিরভাগ দিনেই ডিম দেয়। সেই প্রজাতির মুরগির বাচ্চা বিলি করা হচ্ছে। স্থানীয় এলাকাতেই ডিমের চাহিদা রয়েছে। তাই তা বিক্রির জন্য বাইরে যেতে হয় না।
তাছাড়া আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ার জন্য এই জেলার গ্রামীণ এলাকার বহু লোকজনই পুষ্টির অভাবে ভোগেন। তাঁরা বাড়িতে ডিম দেওয়া মুরগি চাষ করে যেমন আয় করতে পারবেন, তেমনই নিজেরাও প্রোটিনের ঘাটতি পূরণের জন্য তা খেতে পারবেন। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি দেশি মুরগি বা হাঁসের ডিমেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই সমস্ত ডিমের দামও বেশি। তাই আগামীদিনে দেশি বিভিন্ন ধরনের দেশি মুরগি এবং হাঁসের চাষ বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হবে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, জেলাতে করকনাথ মুরগির চাষও শুরু হয়েছে। এই মুরগির মাংস এবং ডিমে প্রচুর প্রোটিন রয়েছে। দামও অনেক বেশি। জেলায় এক ব্যক্তি পরীক্ষামূলকভাবে করকনাথের চাষ শুরু করেছেন। এই ধরনের মুরগির শরীরের সমস্ত অংশ কালো। এমনকী, ডিমের রংও ধূসর। রাজ্য সরকার এই মুরগির চাষও বাড়ানোর দিকেও জোর দিয়েছে। দক্ষিণ ২৪পরগনা এবং নদীয়া জেলায় অনেকেই এই মুরগির চাষ করে লাভবান হয়েছেন।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি জেলার অন্যান্য জেলাতেও ডিম উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়েছে। তবে মুর্শিদাবাদের মতো আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া জেলা গুলিতেই এই চাষে গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এখন চাহিদা মেটাতে সমস্ত জেলাতেই ভিনরাজ্য থেকে ডিম আনতে হয়। আগামী দিনে রাজ্য সরকার টার্গেট নিয়েছে রাজ্যে মুরগি চাষ বাড়িয়ে ডিমের চাহিদা মেটানো হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত ডিম এরাজ্য থেকে ভিনরাজ্যে পাঠানো হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকেও একাজে নামানো হবে। তাতে তারা আর্থিকভাবে আরও বেশি সমৃদ্ধশীল হয়ে উঠতে পারবে।