বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
জেলার পুলিস সুপার শ্যাম সিং বলেন, এদিনের ঘটনায় কারা জড়িত রয়েছে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আপাতত একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি-১ ব্লকের আনন্দ পঞ্চায়েতের পুখুডিহি গ্রামটি সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাজ্য সড়কের উপরেই অবস্থিত। মঙ্গলবার বিকেলে সেখানে সমান্য গণ্ডগোল হয়। পরে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে দাবি বাসিন্দাদের। কিন্তু বুধবার সকালে ফের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ওই গ্রামেরই পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে এদিন গণ্ডগোল হয়। বাসিন্দাদের দাবি, সূর্য ওঠার সময়ই গ্রামের রাস্তা ও বাড়ির দেওয়ালে এলোপাথাড়ি বোমাবাজি করা হয়। পুলিস এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও দিনভর বাসিন্দাদের মনে আতঙ্ক ছিল।
এদিন সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাস্তার উপর কালো পিচের বিভিন্ন অংশে বোমার চিহ্ন রয়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়িকে লক্ষ্য করেও বোমাবাজি করা হয়েছে। সেইসব দেওয়ালে বোমার চিহ্ন স্পষ্ট ছিল। এছাড়া রাস্তার ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাজা বোমা পড়ে থাকতেও দেখা যায়। বাসিন্দারা বোমাগুলিতে জল ঢেলে দেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে গ্রামে কিছু দুষ্কৃতী হাতে বোমা, মদের বোতল ও পাথর নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরে সেগুলি ছোঁড়া হয়। রাস্তায় বোমার দাগের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় বোতলের কাঁচের টুকরো ও পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। সাতসকালেই গ্রামে অশান্তি হওয়ায় ওই রুটে বেশ কিছুক্ষণ যান চলাচলও ব্যাহত হয়। পরে সিউড়ি থানার পুলিস গিয়ে গ্রামের রাস্তায় টহল দেয়।
এদিনের ঘটনায় বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন। বোমার শব্দে ওই গ্রামের এক বৃদ্ধা সংজ্ঞা হারান। তাঁর মতো অনেকেই আতঙ্কে বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রৌঢ়া বলেন, আগে এরকম গণ্ডগোল হয়নি। কারা বোমাবাজি করেছে জানি না। তবে, বাড়িতে আত্মীয়দের আসার কথা থাকলেও তাঁরা এই ঘটনায় আতঙ্কে আসবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রাম লাগোয়া একটি বালিখাদ রয়েছে। ওই বালিখাদের দখল কার হাতে থাকবে তা নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ রয়েছে। বছর দু’য়েক আগে গ্রামে দু’ই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। এদিন সকালেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। পুলিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে গেলে তাদের গাড়ির সামনেই বোমাবাজি করা হয় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
এছাড়া ওই গ্রাম আগে তৃণমূলের দখলে ছিল। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশে পর এখানে বিজেপির উত্থান ঘটে। তারপরই গ্রামের ক্ষমতা দখলে রাখতে দু’পক্ষই লড়াই করতে ময়দানে নেমেছে। তাছাড়া গত সোমবার সেখানে তৃণমূল একটি বাইক মিছিল করে। তারপর এলাকার ক্ষমতা দখলে রাখার জন্যই এদিন বোমাবাজি করা হয়। পুলিসের অবশ্য দাবি, দু’ই পাড়ার মধ্যে গণ্ডগোলে বোমাবাজি হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার পুলিস জেলাজুড়ে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন থানা থেকে ২৬৮টি বোমা উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারও করা হয় বহু দুষ্কৃতীকে। তারপরও এদিন সকালে বোমাবাজির ঘটনায় ফের বোমা মজুত নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিলা বিবি বলেন, গ্রামের (সাহেব) নামে এক ব্যক্তি বর্তমানে বিজেপি করছে। তার নেতৃত্বেই এদিন আমাদের বাড়িতে এসে বোমাবাজি করা হয়েছে। শতাধিক বোমা বিভিন্ন জায়গায় ফাটানো হয়েছে। বালিঘাটের দখল নিয়ে এলাকা অশান্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা মানাই মির্ধা বলেন, গ্রামের অপর প্রান্তের ক্লাবের কয়েকজন যুবক বিজেপি করছে। সেখানকার কিছু লোক এদিন গ্রামে বোমাবাজি করে অশান্তি করেছে।
অপরদিকে, শেখ জনি বলেন, গ্রামে অসামাজিক পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছিল। তার প্রতিবাদ করায় আমার মা’কে হেনস্তা করা হয়। এদিন তারাই গ্রামে বোমাবাজি করে। বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, দল বোমা, বন্দুকের রাজনীতি বিশ্বাস করে না। এদিন সেখানে তৃণমূলের লোকেরাই বোমাবাজি করেছে।