বিএনএ, কৃষ্ণনগর: নদীয়া জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে প্রত্যেকটি শ্রেণী এবছর একটি করে গাছ দত্তক নিচ্ছে। একটি শ্রেণীর পড়ুয়ারা একটি গাছ পরিচর্যা করবে। প্রাথমিকভাবে জেলার ২৬৪৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮ হাজার গাছ দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই প্রকল্পে সহায়তা করছে নদীয়া জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির ক্যাম্পাসেই এবছর ৮ হাজার চারা গাছ লাগানো হবে। চারাগাছগুলিকে দত্তক নেবে পডুয়ারা। একটি শ্রেণীর জন্য একটি গাছ। চারা গাছগুলিকে বড় করে তোলার জন্য পড়ুয়ারা দায়বদ্ধ থাকবে।
নদীয়া জেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৬৪৪টি। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পড়ুয়ারা রয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য চারটি গাছ বরাদ্দ করা হয়েছে। চারাগাছ লাগিয়ে পরিচর্চা করবে পড়ুয়ারা। চারাগাছের গায়ে লেখা থাকবে বিভিন্ন শ্রেণীর নাম। চারাগাছগুলি রোপণের দিন একটি ছোট অনুষ্ঠান করবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই প্রকল্পে পড়ুয়াদের অভিভাবকদেরও সংযুক্ত করা হবে। যাতে তাঁরা নিজেদের ছেলে মেয়েদের গাছের পরিচর্চায় উৎসাহিত করেন। সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে চারাগাছ লাগানো প্রক্রিয়া শুরু হবে। আগামী মাসের মধ্যে গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। বনদপ্তর থেকে চারাগাছগুলি দেওয়া হচ্ছে। গাছের সচেতনতা নিয়ে আগামী ১৫ আগস্ট এলাকায় পদযাত্রা করবে বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।
নদীয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ রায় বলেন, একটি শ্রেণী একটি গাছকে দত্তক নেবে। প্রথম শ্রেণীর পড়ুয়ারা যখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হবে, তখন তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর গাছকেই পরিচর্চা করবে। আবার প্রথম শ্রেণীর গাছকে পরিচর্চা করবে নতুন ভর্তি হওয়া পড়ুয়ারা। এভাবে গাছগুলি পড়ুয়াদের মাধ্যমে বড় হবে। প্রতি বছর বনদপ্তর হাজার হাজার চারা গাছ রোপণ করে থাকে। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছ মরে যায়। চারাগাছগুলিকে বাঁচানোর জন্য বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণীকে একটি করে গাছ দত্তক দিচ্ছি। যে সব স্কুলে ফাঁকা জায়গা নেই, সেই সব স্কুলে ছাদের উপরে টবে গাছ থাকবে। চেয়ারম্যান বলেন, ক্লাস শুরুর আগে প্রার্থনা সঙ্গীতের পর পড়ুয়াদের একটি গল্প বলা হয়। তা হল, একটি পাখি পুষেছিলাম, পাখি পালিয়ে গেল। একটি কাঠবেড়ালি পুষেছিলাম, সে পালিয়ে গেল। কিন্তু একটি গাছ যখন লাগালাম, তখন পাখি ও কাঠবেড়ালি দু’জনেই ফিরে এল। সবুজরক্ষায় পড়ুয়াদের নিয়ে এইসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তাদেবী বলেন, গাছের অভাবে বায়ু দূষণ বাড়ছে। ছোটদের শ্বাসকষ্ট রোগ বাড়ছে। তাই গাছ লাগানো জরুরি। এই জেলার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারটি করে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উচ্চবিদ্যালয়গুলিতেও যাতে গাছ লাগানো যায়, তা নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।
উল্লেখ্য, পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ ‘কেয়ার’ নেয় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সূত্রের খবর, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত সব ক্লাসের পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের চিহ্নিত করেন শিক্ষকরা। বিগত ‘সামমেটিভ’ পরীক্ষায় যারা ডি-গ্রেড পেয়েছিল বা অকৃতকার্য হয়েছিল, তারাই পিছিয়ে পড়া পড়ুয়া। সংসদের চেয়ারম্যান গত বছর একটি নির্দেশিকা প্রতিটি বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন। নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের ক্লাসের প্রথম সারিতে বসাতে হবে। ‘তোমরাও পারবে’,‘ তোমাদেরও ভাল হবে’ এই সমস্ত উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলে ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মোট পাঁচটি পদক্ষেপ নিতে হবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের জন্য। বিশেষ কেয়ারের সুফল মিলেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে। এবার গাছ লাগানো পরিকল্পনা সফল করতে সবরকম উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।