পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
রথের সময় জগন্নাথদেব ও মদনগোপালজিউর মাসিরবাড়ি আগমন উপলক্ষে ন’দিন ধরে মহিষাদলের ঘাঘরা গ্রামের গুণ্ডিচাবাটিতে জমজমাট উৎসব চলে। সুন্দর করে সাজানো হয় মণ্ডপ, চারদিক রঙবাহারি আলোয় সেজে ওঠে। পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল জগন্নাথদেব ও মদনগোপাল জিউয়ের রাজকীয় ভোগ নিবেদন অনুষ্ঠান। সুন্দর করে সাজানোর পর রাজকীয় ভোগ নিবেদন করা হয় রাজবাড়ির পুরনো রীতি মেনে।
রাজবাড়ির এস্টেট ম্যানেজার শীতল গৌতম বলেন, রাজবাড়ি থেকে জগন্নাথদেব ও মদনগোপালজিউ রথের সময় যখন মাসির বাড়ি আসেন। তখন তাঁর আপ্যায়নে যেন কোনও ত্রুটি না থাকে সেদিকে তীক্ষ্ম নজর থাকে রাজপুরোহিত থেকে কর্মকর্তা সকলেরই। সেজন্য প্রতিদিনই সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় তাঁকে রাজকীয় ভোগ নিবেদন করা হয়। ন’দিন ধরেই দুপুরে ও রাতে তাঁকে বিশাল বড় থালায় পোলাও, ফ্রায়েড রাইস, পাঁচ রকমের ভাজা, ছানা ও পনিরের তরকারি, ডাল, সুক্তো, পটলের দোর্মা, আমের চাটনি, গোবিন্দভোগ চালের পায়েস, রাজভোগ ও সন্দেশ সাজিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়।
এই ভোগকে কেন্দ্র করে একটি মজার প্রথা চালু রয়েছে। প্রথমে রাজবাড়ির গোপালজিউয়ের মন্দিরের রাধারানির কাছ থেকে ‘মেলান ভাত’ আসে মাসিরবাড়িতে। জগন্নাথের ভোগের সময় সেটি মিশিয়ে রান্না করা হয়। মেলান ভাত হল নানা ধরনের সব্জির খোসা। এর মাধ্যমে রাধারানি গোঁসা করে তাঁর কষ্টে থাকার কথা জগন্নাথকে জানান। সেই খোসা ভালো করে ভেজে ভোগের রান্নায় মেশানো হয়। ভোগ নিবেদনের পর প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের সেই ‘রাজভোগ’ নাটমন্দিরে বসিয়ে খাওয়ানো হয়।
মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তিলককুমার চক্রবর্তী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথদেবের মাসিরবাড়ি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়েছিল। স্থানীয় মানুষজনের উদ্যোগে প্রায় ২৫লক্ষ টাকা খরচ করে এর সংস্কার করা হয়। বছর দুই হল মাসির বাড়ি ঝাঁ চকচকে হয়ে উঠেছে। ভেঙে পড়া মন্দির ও নাটমন্দির সংস্কার করে পাথর ও টাইলস বসানো হয়েছে। অতিথিদের বসার ঘর, ফ্যান, আলো ও পানীয় জলের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মাসিরবাড়িতে জগন্নাথদেবের পোলাও প্রসাদ বসে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্থানীয় আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ সংকর্ষণ মাইতি বলেন, মহিষাদলের রথের বৈশিষ্ট্য হল এখানে জগন্নাথদেবের সঙ্গে মাসির বাড়ি আসেন কুলদেবতা মদনগোপালজিউ। সেজন্য দু’জনেরই পুজো হয়। এছাড়া জগন্নাথদেব যখন বাড়ি অর্থাৎ মন্দিরে ফেরেন তখন ‘রাধার মানভঞ্জন’ নিয়ে মজার অনুষ্ঠান হয়। জগন্নাথদেব মাসিরবাড়ি থেকে ফেরার পথে প্রচুর আম ও কাঁঠাল সঙ্গে করে নিয়ে যান। মন্দিরে গিয়ে জগন্নাথদেবের ‘অভিষেক’ হয়। উল্টো রথের দিন সেই অনুষ্ঠান সত্যিই দেখার মতো। আগে অভিষেকের দিন তোপ ধ্বনি করা হতো। এখন চকোলেট বোমা ফাটিয়ে প্রতীকী অনুষ্ঠান হয়। এই রীতিনীতি অন্য কোথাও দেখা যায় না।
রাজ এস্টেটের কর্মী স্বপন চক্রবর্তী বলেন, রথের সময় রাজবাড়ি দেখতে দূরদূরান্তের বহু মানুষ আসেন। এখন রাজবাড়ির সামনে তরুণ প্রজন্ম ও স্কুল কলেজ পড়ুয়াদের সেলফি তোলার ভিড় লেগেছে। এবারই প্রথম রথের সময় পর্যটকরা রয়েল গেস্ট হাউসে থাকার জন্য ভিড় করছেন এবং বুকিংও ভালো হচ্ছে।