বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
পুলিস সুপার শ্যাম সিং বলেন, আমরা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করেছি। কীভাবে, কারা এই বিস্ফোরক ওই জায়গায় নিয়ে এসেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, কিছু পাথর খাদান ব্যবসায়ী অবৈধভাবে পাথর ব্যবসা চালাতে গিয়ে এই ধরনের অবৈধ বিস্ফোরক সংগ্রহ করে। পুরো চক্রটিকেই ধরার চেষ্টা হচ্ছে।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, নিরাপত্তার কথা ন্যূনতম চিন্তা না করে নিত্যদিন এই এলাকায় চলে অবৈধ বিস্ফোরক কারবার। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আসানসোল হয়ে বিস্ফোরক চলে আসছে জেলায়। তা আবার অনেক সময়ে বর্ডার পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে ঝাড়খণ্ডের খাদান এলাকাতেও। তাই আন্তঃরাজ্য পাচার চক্রও জড়িয়ে রয়েছে বলে অনেকের দাবি। তাঁদের অভিযোগ, শাসক দল ও পুলিসের একাংশের মদতেই বছরভর চলে এই কারবার। উল্লেখযোগ্যভাবে এবারও প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করলেও চক্রের কোনও মাথাকে ধরতে পারেনি পুলিস।
রামপুরহাট, মহম্মদবাজারের পাঁচামি, নলহাটি, মুরারইয়ের রাজগ্রাম বীরভূম জেলার পাথর শিল্পাঞ্চলজুড়ে গজিয়ে উঠেছে কলা-টুপি-জোড়ার কারবার। অবৈধ বিস্ফোরক কারবারকে এই নামেই চেনেন এলাকার বাসিন্দারা। কলা অর্থাৎ জিলেটিন স্টিক, টুপি অর্থাৎ ডিটোনেটর এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে জোড়া নামেই চেনে সকলকে। পাথর খাদান এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটাতে গেলে এই তিনটি উপাদান আব্যশিক। পাথর স্তরে জিলেটিন স্টিক গুঁজে সেখানে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট দিয়ে ডিটোনেটর সংযুক্ত করে তারের সাহায্যে দূর থেকে বিস্ফোরণ করে পাথরের স্তরে ভাঙন ধরানো হয়। রামপুরহাট থানার বড়জোল ও রদিপুর গ্রামের মাঝে ক্যানেলের পাশে কালভাটের নীচে থেকে আটটি বস্তায় আশি হাজার ডিটোনেটর ও স্থানীয় একটি গোডাউন থেকে ১১৯ কুইন্টাল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধারের ঘটনা থেকেই অবৈধ কারবার নিয়ে ফের জেলাজুড়ে চর্চা শুরু হয়েছে। ওইদিন পুলিস বিস্ফোরক উদ্ধার করার পাশাপাশি বুধবার সিআইডির একটি টিমও এলাকা পরিদর্শন করে।
কিন্তু এই অবৈধ কারবারের রমরমা ক্রমশ বাড়ছে? এর পিছনে একমাত্র কারণ হল, খাতায় কলমে পাথর খাদান বন্ধ থাকলেও, পুলিস প্রশাসনের নাকের ডগাতেই পুরোদমে অবৈধভাবে খাদান চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনও বৈধ খাদান ব্যবসায়ীকে বিস্ফোরক ব্যবহারের জন্য ‘ইউজার লাইসেন্স’ নিতে হয়। কোনও বৈধ বিস্ফোরক ব্যবসায়ী খাদান মালিককে বিস্ফোরক সরবরাহ করতে পারবে এবং কত বিস্ফোরক দেওয়া হল তা অনলাইনে রিপোর্ট করতে হয়। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকেই জেলায় ২১৭টি খাদানের মধ্যে ২১১টি বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশই চালু রয়েছে বলে অভিযোগ। এদিকে ওই অবৈধ খাদানে কোনও বৈধ বিস্ফোরক ব্যবসায়ী বিস্ফোরক সরবরাহ না করার জেরে গজিয়ে উঠেছে বিস্ফোরকের আন্তঃরাজ্য পাচার চক্র। যেখানে বৈধ কারবারের জন্য বিশেষ বিস্ফোরণ নিরোধক গাড়ি করে বিস্ফোরক রাখার ঘর ‘ম্যাগাজিন’ থেকে তা খাদানগুলিতে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু এখন সেই সবের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র অরক্ষিতভাবে রাখা হচ্ছে এই বিস্ফোরক। যার জেরে এলাকার নিরাপত্তা নিয়েও বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামপুরহাটের রদিপুর এলাকাটি এই অবৈধ কারবারের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সময়েই নিয়ম করে এখানে কারবার চলে। এলাকার বহু যুবকও এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনরাত এই ব্যবসা কীভাবে পুলিস, শাসক দলের অলক্ষ্যে চলতে পারে? তবে এই অবৈধ বিস্ফোরক চক্র ভাঙতে অবশ্যই পুলিস-প্রশাসনকে আগে অবৈধ খাদান বন্ধ করতে হবে। কারণ অবৈধ খাদান চালু থাকলে কিছুদিনের মধ্যে ফের অবৈধ বিস্ফোরক কারবার গড়ে উঠতে বাধ্য। এখন দেখার এই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের পরেও পুলিস-প্রশাসনের ঘুম ভাঙে কিনা।