বিএনএ, আরামবাগ: গোঘাটের পর এবার আরামবাগের দেউর গ্রামে কাটমানি ফেরতের দাবিতে পঞ্চায়েত সদস্যার বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাল বিজেপির নেতা-কর্মীরা। এছাড়া পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী তথা তৃণমূল নেতা বাবর আলি খাঁকে হেনস্তার পাশাপাশি গালিগালাজ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এই ঘটনায় বাবর সাহেব এদিন দুপুরে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েছেন। পাশাপাশি থানায় অভিযোগ দায়েরও করেন। পঞ্চায়েত সদস্যা অবশ্য কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিস জানিয়েছে, কাটমানি ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। পাশাপাশি মারধরের একটি অভিযোগও হয়েছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগের গৌরহাটি-১ পঞ্চায়েতের দেউর গ্রামের বাসিন্দা তৃণমূল নেতা বাবর আলি খাঁ-র স্ত্রী রোহিলা বিবি বর্তমানে পঞ্চায়েতের সদস্যা। তিনি গত পঞ্চায়েত বোর্ডেও ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধেই কাটমানি নেওয়া সহ বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাড়ি ঘেরাও করেন ওই গ্রামের বিজেপি সমর্থকরা। ঘটনার খবর পেয়ে আরামবাগ থানার পুলিস ঘটনাস্থলে যায়। পুলিস কাটমানি প্রসঙ্গে ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিলে কয়েক ঘণ্টা পর পঞ্চায়েত সদস্যা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ঘেরাও মুক্ত হন। তবে তারপরও ওই এলাকায় চাপা উত্তেজনা ছিল।
ওই গ্রামের বিজেপি নেতা আক্তার আলি সা, খোকন খাঁ বলেন, রাজ্যে পরিবর্তনের আগে পঞ্চায়েত সদস্যা মাটির ঘরে থাকতেন। কিন্তু, ক্ষমতায় আসার বছর খানেক পরই পাকা দোতলা বাড়ি করেছেন। গ্রামে জব কার্ডের কাজ, কবর স্থান নির্মাণেও অনিয়ম করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পের থেকে কাটমানি নিয়েছেন। সমস্ত টাকা একা খেয়েছেন। গ্রামের কোনও মানুষের সুরাহা করেননি। তাই এদিন বিজেপি সমর্থকদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও পঞ্চায়েত সদস্যার বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান।
তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই কাটমানি ফেরতের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই এদিন আমরা কাটমানি ফেরতের জন্য পঞ্চায়েত সদস্যার কাছে দাবি জানিয়েছি। অভিযোগ অস্বীকার করে পঞ্চায়েত সদস্যা রোহিলা বিবি খাঁ বলেন, প্রকল্প থেকে কোনও কাটমানি নেওয়ার প্রশ্নই নেই। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে এদিন সিপিএমের হার্মাদরা বিজেপির পতাকা ধরে বাড়িতে ঝামেলা করে।
সদস্যার স্বামী বলেন, এদিন সকালে বাড়ির সামনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসেছিলাম। সেই সময় আক্তার আলি সা সহ কয়েকজন এসে আমাদের মারধর শুরু করে। আমাকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। এই গ্রামে ২০১৩ সালের পর থেকে যথাসাধ্য উন্নয়ন করেছি। বহু মানুষ আবাসন প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন। এবারের লোকসভা ভোটেও মানুষ তৃণমূলকেই ভোট দিয়েছেন। আসলে প্রতিবেশী আক্তার সাহেব একাধিক বিয়ে করায় তার প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। তার জেরেই এদিন আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে।
বাবরের অভিযোগ অবশ্য কাল্পনিক বলে দাবি করেছেন আক্তার সাহেব। তাঁর পাল্টা দাবি, বাবরের দুর্নীতির প্রতিবাদে মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
আরামবাগ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, এদিন আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যা ও তাঁর স্বামীকে বিজেপির দুষ্কৃতীরা মারধর করেছে। এভাবেই বিজেপি বিভিন্ন দিকে অশান্তি করছে। কাটমানি নিয়ে অভিযোগ থাকলে মুখ্যমন্ত্রী তা প্রশাসনের কাছে জানাতে বলেছেন। তারপরও এভাবে আমাদের কর্মীদের উপর হামলা করা হচ্ছে।
এব্যাপারে আরামবাগের বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্য বলেন, এদিনের বিক্ষোভের খবর শুনেছি। তবে লিখিত কোনও অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবারই গোঘাটের বহড়াশোল গ্রামে কাটমানি ফেরতের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা পঞ্চায়েত সদস্যার বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। এদিন ফের কাটমানি ইস্যুতে আরামবাগের গৌরহাটিতে বিক্ষোভের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। এর জেরে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূলও। পাশাপাশি এই এলাকায় আরও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
অন্যদিকে, কাটমানি ফেরতের দাবিতে এদিন দুপুরে গোঘাটের হাজিপুর পঞ্চায়েতেও বিজেপি বিক্ষোভ দেখায়। ওই পঞ্চায়েতে কর্তৃপক্ষের কাছে ১৯ দফা দাবিতে ডেপুটেশনও দেয় তারা। এদিন তারা পঞ্চায়েত কার্যালয়ের সামনে সভাও করে। বিজেপির দাবি, ২০১৮-১৯ আর্থিক বর্ষের হিসেব পঞ্চায়েতকে দিতে হবে। বর্ষার আগে সমস্ত কাজ শেষ করতে হবে। পঞ্চায়েত এলাকার সমস্ত রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। ১০০ দিনের কাজে নতুন জবকার্ড দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ও গীতাঞ্জলি প্রকল্পে উপভোক্তাদের নামের তালিকা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। বিজেপির দাবি খতিয়ে দেখা হবে বলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।