কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
জানা গিয়েছে, এদিন রাতে চাণক গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রীনা চক্রবর্তীর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এলাকার বাসিন্দারা। অভিযোগ, বাড়িতে শতাধিক গ্রামবাসী গিয়ে ঘণ্টাখানেক ধরে তাণ্ডব চালায়। প্রাসাদোপম বাড়ির বাইরের লোহার দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে মোটর বাইক, সাইকেল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর দোতলার কাচ, ইট ছুঁড়ে ভেঙে দেওয়া হয়। এরপরে উপপ্রধানের স্বামী প্রদীপ চক্রবর্তীর বাগানবাড়িতে রাখা চারচাকা গাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও ইমরান খান, সমীরণ মাঝি নামে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। তিন তৃণমূল নেতা-নেত্রী পরিবার নিয়ে গ্রাম ছেড়ে জনরোষ থেকে বাঁচতে নতুনহাটে দলীয় কার্যালয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
উপপ্রধান বলেন, রাতে বাড়িতে আচমকা ঢুকে আমাকে টেনে হিঁচড়ে বের করে মারধর করা হয়। ভাঙচুর চালানো হয়। কোনওরকমে আমরা প্রাণে বেঁচে যাই। শুধু পঞ্চায়েতের কাজের হিসেব চাই বলে বিজেপির লোকেরা এইসব তাণ্ডব চালিয়েছে। যদিও স্থানীয় বিজেপি নেতা রঞ্জিত গোস্বামী বলেন, আমাদের কোনও কর্মী বাড়ি ভাঙচুর করেনি। জনগণ ওই তৃণমূল নেতাদের উপর খেপে গিয়ে এসব করেছে।
উপপ্রধানের স্বামী প্রদীপ চক্রবর্তী ওই অঞ্চলের শাসকদলের প্রভাবশালী নেতা। অভিযোগ, প্রদীপবাবু দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বাসিন্দাদের সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কাটমানি খেয়েছেন। এমনকী, গ্রামে ১০০ দিনের কাজের সুপার ভাইজারদের মাধ্যমে কাটমানির টাকা তুলতেন বলে অভিযোগ। চাণকের বাসিন্দা বিভাষ ঠাকুর, তাপস পাল বলেন, গ্রামের তিনজন সুপারভাইজার ছিলেন মানি কালেক্টর। একের পর এক সরকারি প্রকল্পের জন্য সাধারণ গরিব মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা কাটমানি খেয়েছেন ওই নেতা। এছাড়া চাণক অঞ্চলের কৃষ্ণপুর, মাঠগোবিন্দপুর এবং চাণক এই তিন মৌজায় চাষের জন্য চারটি সাবমার্সিবল পাম্প বরাদ্দ হয়েছিল। তারমধ্যে মাঠগোবিন্দপুর ছাড়া বাকি মৌজাগুলির জন্য বরাদ্দ সাবমার্সিবল পাম্পগুলি ওই নেতা তাঁর ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে বসিয়ে দিয়েছেন। চাণক গ্রামের বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, সামান্য একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হয়ে সাত বছরে প্রাসাদোপম বাড়ি, গাড়ি ছাড়াও প্রচুর সম্পত্তি করেছেন। এসবই কাটমানির টাকায় হয়েছে। সরকারি প্রকল্পের কোনও সুবিধা তাঁর কাছে চাইতে গেলেই তিনি টাকা ছাড়া কোনও কথা বলতেন না। এছাড়া এলাকার মানুষের সঙ্গেও তিনি ব্যাপক দুর্ব্যবহার করতেন। যদিও প্রদীপবাবু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নই।
এদিকে, এদিন দুপুরে চাণকে যাতে আর কোনও নতুন করে অশান্তি না ছড়ায় তারজন্য মঙ্গলকোট থানার পুলিস ওই গ্রামে যেতেই তাদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা পুলিসকে বলেন, নেতার বাড়ি পাহারা দিতে এসেছেন, তাহলে এবার নেতার খাওয়া কাটমানির টাকা আপনারা ফেরত দিন। তারপরেই গ্রামে ১০০ দিনের কাজের সুপারভাইজারদের ডেকে এনে প্রকাশ্যে কাটমানি খাওয়ার কথা স্বীকার করানো হয়। সুপারভাইজার সহদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের দিয়ে টাকা তোলানো হতো। কিন্তু এখন ওই কাটমানির টাকা আমাদেরই ফেরত দিতে বলছে। কিন্তু এখন আমরা কী করে দেব। আমরা ওই টাকা নিইনি। সব টাকা অন্য কেউ নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রবিবার এই গ্রামে একই অভিযোগে নেতাদের নিয়ে সালিশি সভা বসানো হয়। ফের এদিন এই ঘটনায় গোটা গ্রামে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিস জানিয়েছে, ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার না হলেও গ্রামে পুলিসি টহল চলছে।