বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এবার লোকসভা ভোটে অধীরবাবু জেতার পর বহরমপুর শহর তো বটেই গোটা মুর্শিদাবাদ জেলায় সেভাবে বিজয় মিছিল বের করেনি কংগ্রেস। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জায়গায় বিজয় মিছিল হলেও তাতে জেলা কংগ্রেসের তেমন সায় ছিল না বললেই চলে। অধীরবাবুকে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা করার খবর এদিন দুপুরে টেলিভিশনের পর্দায় ভাসতেই কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা আনন্দে মাতেন। বিকেলে দলের জেলা কার্যালয় থেকে তাঁরা বিশাল মিছিল বের করেন। মিছিলের সামনে ছিল বাজনা। তারপর সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও অধীরবাবুর ছবি হাতে ছিলেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। আনন্দে কেউ কেউ বাজনার তালে নাচছিলেন। পাশাপাশি, সবুজ ও গোলাপি আবির খেলায় মেতে ওঠেন মিছিলে শামিল নেতা-কর্মীরা। সঙ্গে ছিল স্লোগান। এভাবেই এগিয়ে চলে মিছিল। শহরের কালেক্টরেট মোড়, টেক্সটাইল মোড়, রবীন্দ্রসদন মোড়, মোহন হাউস মোড়, লালদিঘির পাড়া সহ শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে দলের জেলা কার্যালয়ের সামনে মিছিল শেষ হয়। আবির খেলার পাশাপাশি বিভিন্ন মোড়ে বাজি পোড়ানো হয়। চলে মিষ্টি বিলি। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, অধীর চৌধুরীকে যে সম্মান দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা গর্বিত, আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। ভারতবর্ষের ঐক্য রক্ষা ও উন্নয়নের স্বার্থে আরও জোরদার লড়াই চালাবেন বলেই আশা করছি।
বামপন্থী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখেন অধীর চৌধুরী। পরবর্তীতে কংগ্রেসের ঝান্ডা কাঁধে নিয়ে তিনি সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৯১সালে নবগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনে লড়াই করে তিনি পরাজিত হন। ১৯৯৬সালে সেই কেন্দ্র থেকেই বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৮সালে তিনি বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রথম এমপি হন। এরপর তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এবার নিয়ে পরপর পাঁচবার এই কেন্দ্র থেকেই এমপি নির্বাচিত হলেন তিনি। ইউপিএর আমলে তিনি কয়েক মাসের জন্য রেলমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিও ছিলেন তিনি। এবার লোকসভা ভোটে তিনি কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়েছিলেন। তাঁর ভোট মেশিনারি ছিল তৃণমূলের ঘরে। শুধু তাই নয়, তাঁকে হারাতে এই কেন্দ্রের বহরমপুর, কান্দি ও বেলডাঙায় তিনটি নির্বাচনী জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তা সত্ত্বেও অধীরবাবু জয়ী হয়েছেন। তাই এদিন কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের মিছিল কার্যত বিজয় উৎসবের চেহারা নেয়।
প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্তবাবু বলেন, অধীরদাকে ‘বধ’ করার জন্য অনেকে বহু চেষ্টা করেছেন। এখনও কেউ কেউ অধীরদার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি, ওদের বোধোদয় হোক। ওদের শুভবুদ্ধি ফিরুক।
লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর অধীরবাবুর অবস্থান কী হয়, তা নিয়ে জেলার রাজনীতিতে জোর গুঞ্জন উঠেছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন, কংগ্রেস সম্মানজনক পদ না দিলে অধীরবাবু বিজেপিতে যেতে পারেন। প্রদেশ কংগ্রেসের আর এক মুখপাত্র তথা জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মহফুজ আলম বলেন, বাঙালি হিসেবে এর আগে দেশে কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, বরকত গণিখান চৌধুরী, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। এবার অধীরদাকে সেই স্থান দেওয়ায় মুর্শিদাবাদ জেলাবাসী তথা কংগ্রেস কর্মী হিসেবে আমি উচ্ছ্বসিত। পাশাপাশি, অধীরদাকে নিয়ে তৈরি হওয়া জল্পনার এবার অবসান ঘটবে বলেই আশা করছি।
উল্লেখ্য, ২০১৪সালের লোকসভা ভোটে অধীরবাবু ৩লক্ষ ৫৬হাজার ৫৬৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। এবার তাঁর জয়ের লিড কমে দাঁড়িয়েছে ৮০হাজার ৬৯৬। একই সঙ্গে তিনি এই কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে চারটিতেই তৃণমূলের কাছে পিছিয়ে রয়েছেন।