বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
কলকাতার এনআরএসে হাঙ্গামার পর নিরাপত্তার দাবি তুলে মঙ্গলবার দুপুরে কর্মবিরতি আন্দোলনে নামেন এখানকার জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের গেট বন্ধ করে অবস্থান আন্দোলন করছিলেন। রাতে রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ঝামেলাও হয়। রাতে পুলিস সুপার মুকেশ কুমার, অতিরিক্ত পুলিস সুপার(সদর) অনীশ সরকার, বহরমপুরের মহকুমা শাসক দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় দীর্ঘক্ষণ ধরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেননি। এমনকী, হাসপাতালের সুপার দেবদাস সাহা হাতজোড় করে অনুরোধ করেও জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন প্রত্যাহার করাতে পারেননি। এদিন সকাল থেকে ফের হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের গেট বন্ধ করে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয়। দুপুরের দিকে জুনিয়র ডাক্তাররা হাসপাতাল চত্বরে মিছিল করেন। তাঁরা বলেন, নিরাপত্তার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এই অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় এই হাসপাতালে দুই রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম আরতি বিশ্বাস(৬০) ও ফেলু শেখ(৩০)। প্রথমজন নওদার সর্বাঙ্গপুরের বাসিন্দা। দ্বিতীয়জন নবগ্রাম থানার নিমগ্রামের বাসিন্দা। আরতিদেবীর ছেলে স্বরূপ বিশ্বাস কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মঙ্গলবার বাড়ির কলতলায় পড়ে গিয়ে মা মাথায়, কোমর ও বুকে চোট পান। ওইদিন বিকেলে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। সন্ধ্যা পর্যন্ত চিকিৎসা হয়নি। বিনা চিকিৎসায় মায়ের মৃত্যু হয়েছে।
ফেলুর আত্মীয় হাসিবুর শেখ বলেন, ফেলু পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন। পরিবারে তাঁর স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে রয়েছেন। পারিবারিক অশান্তির জেরে মঙ্গলবার দুপুরে ফেলু বিষ খান। প্রথমে তাঁকে সাগরদিঘি ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে রেফার করা হয়। একটি স্যালাইন ও দু’টি ইঞ্জেকশন দেওয়া ছাড়া তাঁর কোনও চিকিৎসাই হয়নি। বুধবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর ঘটনা কোনওভাবেই মানা যায় না। ঘটনাটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানাব। পাশাপাশি, মৃত দুই রোগীর পরিবারের লোকজন ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে বিনা চিকিৎসায় রোগীদের মৃত্যু হয়েছে। আন্দোলনকারীরা বলেন, ওই ঘটনাগুলি জানা নেই। হাসপাতালের সুপার অবশ্য বলেন, বিনা চিকিৎসায় কোনও রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ এখনও পর্যন্ত পাইনি। তবে, দু’টি ঘটনাই খতিয়ে দেখব। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলেন, ঘটনাগুলি শুনেছি। এব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।
এনিয়ে রোগীর আত্মীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এদিন সকালে জরুরি বিভাগের সামনে ক্ষুব্ধ রোগীর আত্মীয়রা বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের একাংশ জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। কোনও রকমে তাঁদের সামাল দেন বহরমপুর থানার আইসি সনৎ দাস। এই অবস্থায় অনেক রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেকে আবার হাসপাতালে এসেও রোগীকে ভর্তি করাতে পারেননি।
এদিন অধীর চৌধুরী হাসপাতালে গিয়ে রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলার পর বলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, এই সমস্যা মেটানোর জন্য আপনি সরাসরি অংশগ্রহণ করুন। ডাক্তারদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসে এই সমস্যা মেটান। চিকিৎসা না পেয়ে শিশু, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা মারা যাচ্ছেন। বাংলাজুড়ে হাহাকার চলছে। অরাজকতা চলছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আপনি, নবান্নের ঘরে বসে থাকতে পারেন না। রাস্তায় নেমে ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসুন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, ইতিমধ্যে এখানকার নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা ১০৬ থেকে বাড়িয়ে ২৭২জন করার প্রস্তাব স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া, জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন করলেও চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিস সুপার বলেন, হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও চাঙ্গা করা হবে।