পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বুধবার সকাল থেকেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাতারে কাতারে রোগী এবং ইনডোরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীর বাড়ির লোকজন গেটের সামনে ভিড় জমান। হাসপাতালের তিনটি গেটে বাঁশ বেঁধে দাঁড়িয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ইমার্জেন্সি বিভাগে জোড়া তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ইমার্জেন্সি বিভাগ লাগোয়া হাসপাতালের গেট দিয়েই বেশির ভাগ রোগী এবং রোগীর বাড়ির লোকজন ভিতরে ঢোকেন। সকাল থেকেই সেখানে আট-দশটি বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। এর প্রতিবাদে রোগীর বাড়ির লোকজনের ক্ষোভ চড়ছিল।
হাসপাতালে ঢুকতে বাধা পেয়ে সকাল ১১টা নাগাদ রোগীর বাড়ির লোকজন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা একযোগে হাসপাতালের সামনে রাজ কলেজ লাগোয়া রাস্তা অবরোধ শুরু করেন। অবরোধের আগে পর্যন্ত ওই এলাকায় কোনও পুলিস ছিল না। অবরোধ শুরু হতেই বর্ধমান থানার আইসি তুষারকান্তি কর এবং ওসি ট্রাফিক চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় যান। জুনিয়র চিকিৎসকদের হুজ্জুতির মোকাবিলায় কিছুটা দূরে দেড় দু’শো লোকজন জড়ো হয়েছিলেন। খবর পেয়ে সেখানে যান আইসি। এদিকে আধ ঘণ্টা অবরোধ চলার পর ১১টা ৩৫মিনিট নাগাদ আচমকা রোগীর বাড়ির লোকজন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা রে রে করে তেড়ে গিয়ে ইমার্জেন্সি বিভাগ লাগোয়া গেটের সামনে জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইট ছোঁড়ার পাশাপাশি বাঁশ দিয়ে পেটাতে শুরু করে। হাসপাতালের তিনটি গেটে ছড়িয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। চিৎকার করে সকলকে ডেকে নেন তাঁরা। অল্প সময়ের মধ্যেই পাল্টা ইট ছোঁড়া শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। হাতে বাঁশ, হকিস্টিক ও উইকেট নিয়ে গোটা এলাকা দাপান তাঁরা। গেট লাগোয়া তৃণমূলের ইউনিয়ন অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তৃণমূলের ইউনিয়ন অফিসে পাঁচজন আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। পুলিস তাদের গাড়িতে তোলার সময় বাঁশ, লাঠি নিয়ে হামলা চালায় জুনিয়র চিকিৎসকরা।
জুনিয়র চিকিৎসক এবং বহিরাগতদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ। তাঁকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে এলাকা থেকে সরিয়ে দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। হাসপাতালের ভিতর এক পুলিস অফিসারকে ঘিরে ধরে মারমুখী হন জুনিয়র ডাক্তররা। সংঘর্ষের পর বিশাল পুলিস বাহিনী নামানো হয়। পুলিসকে দেখে গোব্যাক স্লোগান দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বেলা সাড়ে ১২টার পর অতিরিক্ত জেলাশাসক(সাধারণ) অরিন্দম নিয়োগী, অতিরিক্ত পুলিস সুপার(হেডকোয়ার্টার) প্রিয়ব্রত রায়, বর্ধমান সদর মহকুমা শাসক(উত্তর) পুষ্পেন্দু সরকার প্রমুখ হাসপাতালে যান। তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। জুনিয়র চিকিৎসকরা এই পরিস্থিতিতে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও সংকটজনক রোগীদের চিকিৎসা করতে হবে বলে সিনিয়র চিকিৎসকের নির্দেশ দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। ইমার্জেন্সির সামনে প্রচুর বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সংকটজনক রোগীরা যাতে পরিষেবা পান সেটা নিশ্চিত করার জন্য সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে অতিরিক্ত জেলাশাসক(সাধারণ) জানিয়েছেন।
সকাল থেকেই ১৫দিনের অসুস্থ শিশু থেকে দুর্ঘটনাগ্রস্ত যুবক কাতারে কাতারে রোগী অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে হাসপাতালের সামনে এলেও ভিতরে ঢোকার কোনও সুযোগ ছিল না। এমনকি ভর্তি থাকা রোগীর খাবার দাবার, পানীয় জল এবং পোশাক নিয়েও ভিতরে ঢুকতে পারছিলেন না আত্মীয় স্বজনরা। বরং এদিন প্রচুর সংখ্যক রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে, জুনিয়র ডাক্তারদের উপর হামলার ঘটনায় রোগীর আত্মীয়দের তুলনায় স্থানীয় যুবকদের সংখ্যা বেশি ছিল। মূলত বাথানপাড়া এলাকার কিছু যুবকের উস্কানিতে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল। তবে, জুনিয়র চিকিৎসদেরও বাঁশ বেঁধে গেট থেকে রোগী সহ তাঁদের আত্মীয় স্বজনদের তাড়ানোর ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে।