কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসাপাতালের আউটডোর বন্ধ থাকলেও সবথেকে বেশি উত্তেজনা তৈরি হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে এখানে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়। সকাল থেকেই জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন জুনিয়র ডাক্তাররা। অন্যদিকে, চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে পাল্টা বিক্ষোভে নামেন রোগীর পরিজনরা। হাসপাতালের সামনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পথ অবরোধ করেন তাঁরা। বিক্ষোভ চলার সময় এক চিকিৎসকের গাড়ি ঘিরে তাঁকে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে পুলিসবাহিনী পরিস্থিতি সামাল দেয়। এই অচলাবস্থার মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে মৃত রোগীদের দীর্ঘক্ষণ ডেথ সার্টিফিকেট না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। আউটডোরের পাশাপাশি ইনডোরের মেল মেডিসিন, ফিমেল মেডিসিন, সার্জিক্যাল, শিশু বিভাগ সহ একাধিক ওয়ার্ডে দুর্ভোগের চিত্র এদিন বারবার চোখে পড়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা অমিত মান্ডি, সুতপা ধাড়া বলেন, আমরা কোনও পরিষেবা পাচ্ছি না। বারবার বললেও চিকিৎসক আসছেন না। আমাদের কী দোষ? রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, এদিন চিকিৎসা না পেয়ে বেশ কয়েকজন মুমূর্ষু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই দাবি অস্বীকার করেছে। হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ড বলেন, হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের একটা অংশ আন্দোলন করছেন। কিন্তু সিনিয়র যাঁরা আছেন, তাঁরা রোগীদের দেখভাল করছেন। জরুরি পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে।
জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গি বলেন, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিছুটা সমস্যা হলেও ব্লক ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পরিষেবা তেমন বিঘ্নিত হয়নি। আমরা মনে করি, মানুষকে সমস্যায় ফেলে কোনও আন্দোলন চলতে পারে না।
অন্যদিকে, তমলুক জেলা হাসপাতালের আউটডোরে এদিন সকাল থেকেই অন্যান্য দিনের মতো রোগীদের ভিড় জমে। সকাল ১০টা নাগাদ চিকিৎসক আসবেন না জানতে পেরে রোগীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। বিশাল পুলিস বাহিনী কোনওমতে পরিস্থিতি সামাল দেয়। শেষ পর্যন্ত কয়েকজন চিকিৎসক ইমার্জেন্সিতে বসে জরুরি রোগীদের চিকিৎসা করায় ক্ষোভ কিছুটা কমে। আউটডোরে চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফেরা পটাশপুরের স্বপন জানা বলেন, আমরা আগে জানলে আসতাম না। এই গরমে টাকা খরচ করে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে।
এদিন তমলুক ছাড়াও কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল, পাঁশকুড়া ও এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ ছিল। তবে সব জায়গায় ইমার্জেন্সিতে বসে রোগী দেখেছেন চিকিৎসকরা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, এদিন জেলার কোনও হাসপাতাল থেকে রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। সর্বত্রই পরিষেবা সচল রাখার চেষ্টা হয়েছে। যেখানে আউটডোরে চালু ছিল না, সেখানে চিকিৎসকরা ইর্মাজেন্সিতে বসে রোগী দেখেছেন।
ঝাড়গ্রাম জেলায় এদিন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের আউটডোরের পাশাপাশি প্রাইভেট চেম্বারগুলিতে রোগী দেখা বন্ধ রাখেন চিকিৎসকরা। এদিন সকাল থেকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের আউটডোরে লম্বা লাইন দেখা যায়। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি নার্সিংহোমের চিকিৎসকরা এসে রোগীদের করজোড়ে এই দিনটির জন্য সাহায্য চান। এদিন আউটডোরে রোগী দেখা হবে না জানানোর পর দূর¬-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চরম সমস্যায় পড়েন। লালগড় থেকে আসা কাঁদন হেমব্রম বলেন, সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে দেখাতে এসেছিলাম। আউটডোর বন্ধ থাকায় বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এমন জানলে এত দূর থেকে আসতাম না। হাসপাতাল সুপার মলয় আদক বলেন, আউটডোর বন্ধ থাকলেও ইমার্জেন্সিতে রোগীদের চিকিৎসা হয়েছে।
অন্যদিকে, এদিন গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেও আউটডোর বন্ধ ছিল। তবে ছ’জনের চিকিৎসকের একটি টিম ইমার্জেন্সিতে বসে রোগী দেখেন। এদিন বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরে চিকিৎসকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।