পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের আউটডোরে ভোর থেকেই লাইন পড়ে যায়। বিভিন্ন বিভাগের স্বাস্থ্যকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকদের দেখা মেলেনি। চিকিৎসকদের না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বহু রোগী বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। আসাননগর থেকে এসেছিলেন সারথি বিশ্বাস। তিনি তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। তাঁকেও ফিরে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, ভোরে বাস ধরে হাসপাতালে এসেছিলাম। ১০টা বাজতে চলল, এখনও ডাক্তার আসেনি। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। টাকা নেই বলে প্রাইভেট চেম্বারে যেতে পারিনি। এখন সাধারণ মানুষ কোথায় চিকিৎসা করাবেন।
কৃষ্ণগঞ্জের স্বর্ণখালির বাসিন্দা জ্যোতি রায়। তিনি নার্সিং বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য ফর্ম ফিলআপ করবেন। তার জন্য একটি মেডিক্যাল রিপোর্ট লাগবে। কাজ না মেটায় এদিন তিনিও এসে ফিরে গেলেন। তিনি বলেন, ১৭ জুন ফর্ম ফিলআপের শেষ দিন। মেডিক্যাল রিপোর্টের জন্য জেলা হাসপাতালে এসেছিলাম। এসে দেখলাম আউটডোর বন্ধ। মেডিক্যাল রিপোর্ট না পেলে আমার ফর্ম ফিলআপ হবে না।
রানাঘাট মহকুমাজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালেও ডাক্তারদের কর্মবিরতির কারণে এদিন বন্ধ থাকে আউটডোর পরিষেবা। রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল, শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, ফুলিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হবিবপুর যাদব দত্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আড়ংঘাটা সব্দালপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, দত্তপুলিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শান্তিপুরের গয়েশপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সহ একাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে এদিন ডাক্তারদের কর্মবিরতির কারণে আউটডোর পরিষেবা বন্ধ ছিল।
শরবিন্দু বিশ্বাস নামে ধানতলা থানার পূর্ব নওয়াপাড়ার বাসিন্দা বলেন, তিন মাস আগে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে আমার পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু সন্তান জন্মের পর থেকে বেশ কিছুদিন তাকে এসএনসিইউতে রাখা হয়েছিল। আমার তিনমাসের ছেলেকে জন্মের পর প্রথম টিকা দেওয়া হয়েছে কিনা তা জানার জন্য আজ দু’মাসের বেশি সময় ধরে ঘুরছি। এদিন হাসপাতলে পিপি ইউনিটে আমাকে বিষয়টি জানানোর কথা ছিল। কিন্তু হাসপাতলে এসে দেখছি আউটডোরের পাশাপাশি ওই ইউনিটিও বন্ধ রাখা রয়েছে।
রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল। এখানে রানাঘাট-১ ও ২ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রানাঘাট শহর, তাহেরপুর, বীরনগর এলাকা থেকে প্রতিদিন আউটডোরে বহু মানুষ ভিড় জমান। কিন্তু এদিন সকাল থেকে হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে রোগীদের। ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে আউটডোর পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। সেখানেও কোনও চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায়নি।
শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালেও একই চিত্র। এখানে দেখা গেল, হাসপাতালের আউটডোরের সামনে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে পোস্টার লাগানো রয়েছে। সেখানে লেখা, নীলরতন সরকার হাসপাতালে চিকিৎসককে নিগ্রহের প্রতিবাদে বুধবার হাসপাতালের আউটডোর পরিষেবা বন্ধ থাকবে।
তেহট্ট মহকুমার সব হাসপাতালে আউটডোর পরিষেবা বন্ধ ছিল। ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে। তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ চিকিৎসা করাতে আসেন। শুধু তেহট্ট বা তার আশেপাশের গ্রাম থেকে নয়, পাশের জেলা মুর্শিদাবাদ থেকেও বহু মানুষ এখানে চিকিৎসা করাতে আসেন। ফলে প্রতিদিন এখানে আউটডোরে রোগীর চাপ বেশি থাকে। এদিন আউটডোর পরিষেবা বন্ধ থাকায় রোগীরা হয়রানির শিকার হন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তেহট্টের দুই রোগীর আত্মীয় বলেন, এভাবে আন্দোলন করায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ বেড়েছে। পরিষেবা সচল রেখেও তো আন্দোলন করা যেত। তা কেন করা হল না। সাধারণ মানুষকে বিপদের মুখে ফেলে ডাক্তাররা এভাবে কর্মবিরক্তি করছেন। আসলে জুনিয়ার ডাক্তাররা সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন না। সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা না পেয়ে এদিন অনেক রোগীকে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে বাইরে ডাক্তার দেখাতে হয়েছে। আবার টাকা না থাকায় অনেকে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ও পলাশীপাড়া প্রীতিময়ী গ্রামীণ হাসপাতালেও এদিন আউটডোরে চিকিৎসা করাতে এসে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজন।