কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
জানা গিয়েছে, এদিন গেটম্যানের পরিবর্তে লেভেল ক্রসিংয়ে ডিউটিতে ছিলেন ট্র্যাকম্যান। তাঁর গাফিলতিতেই গেট খোলা অবস্থায় প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আপ লাইনে একটি ইঞ্জিন পাস হওয়ার পরই ট্র্যাকম্যান রামবদন মাহাত গেট তুলে দেন। সেইসময় দু’দিক থেকে যানবাহন ঢুকে পড়ে লাইনে। এরমধ্যেই রেজিনগর স্টেশন থেকে ছেড়ে ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি ঢুকে পড়ে। ট্রেন আসতে দেখে মোটর বাইকের চালক বাইক ফেলে পালায়। ট্রাক্টরের অপর দুই যাত্রী লাফ দিয়ে নেমে পালানোর চেষ্টা করেও গুরুতর জখম হন। ট্রাক্টরের চালক নামতে না পারায় ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন। স্থানীয় হাসপাতালে আনা হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এমার্জেন্সি ব্রেক ধরে ট্রেনটি দাঁড় করান চালক। ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যায় একটি বাইক ও ট্রাক্টরটি। এরপরই উত্তেজিত জনতা গেটম্যানের উপর চড়াও হয়ে মারধর শুরু করে। চালকের দিকে ধাওয়া করে যাওয়ার আগেই তিনি ট্রেন থেকে নেমে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। ৫৩১৭৬ডাউন ট্রেনের ভ্যাকুয়াম পাইপ খুলে দিয়ে সেখানেই আটকে রেখে বিক্ষোভ শুরু করে স্থানীয় মানুষজন। ঘটনার জেরে বিভিন্ন স্টেশনে আপ ও ডাউনের সমস্ত ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। প্রচণ্ড গরমে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। উত্তেজিত জনতাকে বাগে আনতে রেল পুলিসকে সহযোগিতা করে বেলডাঙা ও রেজিনগর থানার পুলিস। পরিস্থিতি সামাল দিতে বহরমপুর থেকে ঘটনাস্থলে যান ডিএসপি(ডিএনটি)। ঘটনাস্থলে আসেন রেলের আধিকারিকরা।
দুর্ঘটনার পর উত্তেজিত স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে প্রহৃত হন গেটম্যানের দায়িত্বে থাকা ট্র্যাকম্যান। উত্তেজিত জনতা ট্রেনটি আটক করে তিন ঘণ্টা ধরে বিক্ষোধ-অবরোধ চালায়। রেলের আধিকারিক, জিআরপি ও পুলিসের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠলেও ক্ষতিপুরণ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী। ট্রেন থেকে লাফিয়ে নেমে উত্তেজিত জনতার অক্রোশ থেকে কোনওক্রমে বেঁচেছেন ট্রেনের চালক। উত্তেজিত জনতাকে থামাতে বিশাল বাহিনী নামানো হয়। রেলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিকভাবে গেটম্যানের গাফিলতিই সামনে এনেছেন। যদিও ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে অবশ্য ঘটনাস্থলে হাজির রেলের কোনও আধিকারিক মুখ খুলতে চাননি। রেল কর্তৃপক্ষ প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে, দুর্ঘটনার জেরে বহরমপুর কোর্ট-কৃষ্ণনগর শাখায় সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পরিষেবা ব্যাহত হয়। অবরোধের কারণে শিয়ালদহ শাখায় দু’টি ইএমইউ, দু’টি প্যাসেঞ্জার ও একটি এক্সপ্রেস ট্রেন দেরিতে চলেছে। আধিকারিকরা দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করছেন।
ঘটনায় গুরুতর জখম গাফ্ফার বিশ্বাসকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জখম অপর একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনজনেরই বাড়ি রেজিনগর থানার দাদপুর। উত্তেজিত জনতার হাতে প্রহৃত ট্র্যাকম্যান রামবদন মাহাতরও চিকিৎসা চলছে।
রেলগেট থেকে রেজিনগর স্টেশনের দুরত্ব চারশো মিটারেরও কম। স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও কেন গেট খোলা থাকল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি গেটম্যানের পরিবর্তে কেন ট্র্যাকম্যানকে রেলগেটের দায়িত্ব দেওয়া হল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে এক্ষেত্রে ট্রেন চালকের গাফিলতির প্রশ্ন ওঠেনি। বিজেপি নেতা হুমায়ুন কবীর বলেন, গাফিলতি যারই হোক তদন্তে বেরিয়ে আসবে। উত্তেজিত মানুষকে শান্ত করে জখম ও মৃতের পরিবার যাতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পায় আমরা তার আবেদন জানাচ্ছি। রেলের আধিকারিকরাও এব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা সাহেব শেখ বলেন, এই ধরনের গাফিলতি এর আগেও একাধিকবার ধরা পড়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সজাগ হয়নি। স্থানীয় অপর এক বাসিন্দা, ঘটনায় স্থানীয় মানুষদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, অনেক সময় রেলগেটে অপেক্ষারত মানুষের চাপেই গেট তুলে দিতে বাধ্য হন গেটম্যান। এদিনও এমনই ঘটনা ঘটেছে।