সংবাদদাতা, রানাঘাট ও নবদ্বীপ: ভোট পরবর্তী সময়ে নদীয়া জেলাজুড়ে রাজনৈতিক অশান্তি অব্যাহত। শনিবার রাতে শান্তিপুরে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির মহিলা সদস্যকে চুলের মুঠি ধরে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। তাঁর বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। অন্যদিকে, রানাঘাটের কুপার্স ক্যাম্প পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জখম হয়েছেন এক যুবক। অন্যদিকে নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজে ছাত্র সংসদের অফিসে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে এভিবিপির বিরুদ্ধে। নবদ্বীপ পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারপাড়াতেও রাজনৈতিক অশান্তি হয়।
স্থানীয় জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে শান্তিপুর থানার ফুলিয়া বেলতলা এলাকায় মৌমিতা দাস নামে ওই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার উপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অনুপস্থিতিতে একদল দুষ্কৃতী ধারালো অস্ত্র নিয়ে মৌমিতা দাসের উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। চুলের মুঠি ধরে তাঁকে মারধর করা হয়। দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। মৌমিতাদেবী বলেন, শনিবার রাতে ঝড় বৃষ্টির পর বাড়িতে আমি একাই ছিলাম। প্রথমে ওই দুষ্কৃতীরা আমার জা রেবা সরকারের টিনের ঘরে ভাঙচুর করে। তাকে হেনস্তা করে। পরে সশস্ত্র বাহিনী আমার উপরে চড়াও হয়। আমাকে চুলের মুঠি ধরে মারা হয়েছে।
শান্তিপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তপন সরকার বলেন, বিজেপি অপ্রত্যাশিতভাবে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে জয়লাভের পর শান্তিপুর ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করার জন্য এভাবে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে শান্তিপুর ব্লকের বিজেপি সভাপতি নির্মল বিশ্বাস বলেন, তৃণমূলের পক্ষ থেকে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে।
অন্যদিকে, রবিবার সকালে রানাঘাট থানার কুপার্স পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বোমা ফেটে এক যুবক গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পেশায় দিনমজুর বিপুল হাওলাদার নামে জখম ওই যুবক বলেন, এদিন সকালে মা প্রথমে আমার বাড়ির গেটের সামনে রাখা একটি লাল রংয়ের কৌটা দেখতে পান। সেটি দেখতে গিয়েই বিপত্তি ঘটে। এর আগে রানাঘাটের বৈদ্যপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের নেতাজি পল্লি এলাকায় বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। কুপার্স ক্যাম্প পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিন্টু দত্ত বলেন, লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করার পর বিজেপি নানা জায়গায় অশান্তি ছড়াচ্ছে। কুপার্স ক্যাম্পের বিজেপি সভাপতি দীপক দে বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে এমন কোনও কর্মী বা সমর্থক এমন হিংসার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়।
অন্যদিকে, শনিবার সন্ধ্যায় নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের মধ্যে ঢুকে ছাত্র সংসদের অফিসে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদে(এভিবিপি)র বিরুদ্ধে। নবদ্বীপ শহর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চেয়ারম্যান সুজিতকুমার সাহা বলেন, এভিবিপির সদস্য ছাড়াও বহু বহিরাগত বন্ধ থাকা অবস্থায় কলেজের পিছন দিক দিয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। সংসদ অফিসে তৃণমূলের পতাকা, ফ্লেক্স ছিঁড়ে দেয়। এভিবিপির নবদ্বীপ মণ্ডলের সভাপতি শুভঙ্কর হালদার বলেন, আমরা কলেজ গেটে শুধুমাত্র পতাকা লাগিয়েছি। বাকিটা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বানানো গল্প।
এদিকে, নবদ্বীপ পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারপাড়ায় তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলা ও পাল্টা হামলার অভিযোগ উঠেছে। গ্রেপ্তার হয়েছে এক তৃণমূল কর্মী। তৃণমূল নেতা গোবিন্দ দেবনাথের ছেলের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এলাকার বেশকিছু তৃণমূল কর্মীকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় কাউন্সিলর নিতাই দাস বলেন, এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে ওরা। অন্যদিকে, বিজেপি যুবমোর্চার সদস্য ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাপি চন্দ পাল্টা বলেন, তৃণমূল দুষ্কৃতীরাই আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়। আমার মা ও দিদিকে হেনস্তা করে। ঘটনাগুলি নিয়ে তদন্ত করছে পুলিস।