পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
এদিন সকালে ঘড়ির কাঁটা সবে সাড়ে ১০টা পার হয়েছে। বাঁকুড়া সহ আশেপাশের এলাকায় হঠাৎ ঘরবাড়ি দুলে ওঠে। প্রথমে কেউ বিষয়টি ঠাওর করতে পারেনি। ঘটনার আকস্মিতা কাটিয়ে ভূমিকম্পের আঁচ পাওয়া মাত্র বাসিন্দারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ান। মহিলারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিতে শুরু করেন। বড়দের পাশাপাশি কচিকাঁচাদের চোখেমুখেও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়-পরিজনদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়ায়। স্বাস্থ্য কর্মীরাও হাসপাতাল থেকে বাইরে বের হয়ে যান।
হীড়বাঁধের মশিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুরা দত্ত, উমা দত্ত বলেন, ভূমিকম্পের সময় গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ত ছিলাম। বাড়ির পাশের রাস্তায় রোড রোলার জাতীয় কোনও ভারী যানবাহন যাতায়াত করছে বলে প্রথমে ভেবেছিলাম। পরে প্রতিবেশীদের চিৎকারে ভূমিকম্পের বিষয়টি টের পাই। এদিন প্রকৃতির উদ্দেশে শঙ্খ বাজিয়ে শান্ত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করা হয়।
গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের অমরকাননের বাসিন্দা অর্ণব সিংহ বলেন, ভূমিকম্পের জেরে আমাদের দালান বাড়িতে ফাটল ধরেছে। দেওয়াল এবং দরজার মাথার বেশ কিছুটা অংশ ফাঁক হয়ে গিয়েছে।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, এদিন সকাল ১০টা ৩৯ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে বাঁকুড়ায় ভূমিকম্প হয়। ২৩.৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬.৯ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বাঁকুড়ার ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল বলে আবহাওয়া দপ্তর আমাদের জানিয়েছে। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৪.৮। আমাদের জেলায় ক্ষয়ক্ষতির তেমন খবর পাওয়া যায়নি।
জেলার পুলিস সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, এদিন ভূমিকম্পের পর পুলিস পরিস্থিতির উপর নজর রাখে। কোথাও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।
সকালে পুরুলিয়া শহর সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তেও মৃদু কম্পন অনুভূত হয়। অনেকেই কম্পনের অনুভূতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ আবার বাড়ির বাইরেও বেরিয়ে পড়েন। তবে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ভূমিকম্পের সময় অফিসেই ছিলাম। তবে সেভাবে বুঝতে পারিনি। বিভিন্ন ব্লক থেকে রিপোর্ট জানতে চেয়েছি। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও জায়গাতেই কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। কম্পনের মাত্রা অত্যন্ত কম ছিল বলে মনে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে পুরুলিয়া শহর সহ জেলার রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকা এবং ঝালদা ও মানবাজার মহকুমা এলাকার একাধিক জায়গায় কম্পন অনুভূত হয়েছে। কোথাও বিছানা নড়তে শুরু করে, কোথাও আবার টেবিলে থাকা বিভিন্ন সামগ্রী নড়তে থাকায় কার্যত ভালোভাবেই কম্পন বুঝতে পারেন বাসিন্দারা। শহরের কেউ কেউ রাস্তায় বেরিয়ে এবিষয়ে অন্যান্যদের কাছে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন। অনেকে আতঙ্কিতও হয়ে পড়েন। কম্পনের পরই সোশ্যাল মিডিয়াতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দারা তাঁদের এলাকায় কম্পন অনুভূত হওয়ার কথা অন্যদের জানান। একই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই জেলার আর কোন এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছে তা জানতে চান বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথাও অন্যদের জানান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃদু ভূমিকম্পের ফলে জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বাসিন্দাদের মধ্যে কম্পন অনুভূত হওয়ায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়।
এদিন আরামবাগ মহকুমার মধ্যে গোঘাটে খুবই সামান্য কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তার জেরে অবশ্য কোথাও কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভূমিকম্প নিয়ে সাময়িক চাঞ্চল্য ছড়ায়। আরামবাগের মহকুমা শাসক লক্ষ্মী ভব্য তান্নিরু বলেন, ভূমিকম্পের জেরে ব্লক থেকে কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।