সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ফলাফল বের হতেই রাজনৈতিক হিংসার ঘটনায় উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে বীরভূমে। বৃহস্পতিবার রাতেই সাঁইথিয়া ও মহম্মদবাজারে রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দেয়। কোথাও তৃণমূল কর্মীর পথ আটকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। কোথাও আবার বিজেপি সমর্থকদের বাড়ির সামনে বোমাবাজি করার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বহু জায়গায় আগাম কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে রুট মার্চ শুরু করেছে পুলিস। জেলার পুলিস সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ বলেন, কমিশনের নির্দেশে প্রতিটি থানা এলাকায় এই ধরনের রুট মার্চ চলছে। তবে, কতদিন এই রুটমার্চ চলবে তা বলতে পারেননি তিনি।
বৃহস্পতিবার রাতে সিউড়ির ভোট গণনা কেন্দ্র থেকে বাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সাঁইথিয়া থানার হরিষড়া অঞ্চলের বেহিড়া গ্রামের তৃণমূল কর্মী পীযুষ ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, রাতে মল্লারপুর-সাঁইথিয়া রোডের উপর লেট পাড়ার কাছে জনা পাঁচেক দুষ্কৃতী তাঁর পথ আটকে বাইক থেকে নামিয়ে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর করে। তিনি বলেন, গলায় গামছার ফাঁস লাগিয়ে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলারও চেষ্টা করা হয়। আমি অজ্ঞান হয়ে গেলে মারা গিয়েছি ভেবে ওরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় মানুষজন আমাকে উদ্ধার করে সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করে। দুষ্কৃতীরা বিজেপি আশ্রিত। এদিন হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পরই তিনি এলাকার পাঁচ বিজেপি কর্মীর নামে থানায় অভিযোগ জমা দেন। এলাকার তৃণমূল নেতারা বলেন, হরিষড়া অঞ্চল থেকে এবার লিড পাওয়ার পরই মারমুখী হয়ে উঠেছে বিজেপি। যদিও এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই বলে দাবি করেছেন বিজেপির ব্লক সভাপতি ভবানীপ্রসাদ পাল। তিনি বলেন, রাস্তায় বাইকের লাইট ডিপার করাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। কাউকে মারধর করা হয়নি।
অপরদিকে ওইদিন গভীর রাতে মহম্মদবাজার থানার আঙারগড়িয়া অঞ্চলের গৌরনগর গ্রামে বেশ কয়েজকন বিজেপি সমর্থকদের বাড়ির সামনে বোমাবাজি করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গ্রামের বাসিন্দা আশিস মণ্ডল, সুভাষ বাগদি, সঞ্জয় বাগদি বলেন, রাতে আমাদের বাড়ির সামনে বোমাবাজি করে। প্রথমে আমরা ভয় পেলেও পরে সকলে একত্রিত হয়ে বেরিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁরা প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে চলে যায়। রাতেই খবর পেয়ে এলাকায় আসে সিভিক ভলান্টিয়াররা। তাঁদের দাবি, গ্রামে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইছে তৃণমূলীরা। আমরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের আঙারগড়িয়া অঞ্চল সভাপতি উদয়ভানু মণ্ডল বলেন, এসব মিথ্যা অভিযোগ। কোনওরকম বোমাবাজি করা হয়নি। চকোলেট বোমা দু-একটি কেউ হয়তো ফাটিয়েছে। পুলিস অবশ্য ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
এদিকে ভোট গণনার পরবর্তী হিংসা ও হানাহানি এড়াতে এদিন দুবরাজপুরের হেতমপুর, পদুমা, যশপুর ও লোবা সহ একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে রুটমার্চ করান ওসি দেবব্রত সিনহা। প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে এই দুবরাজপুর এলাকায় তৃণমূলকে বহু ভোটে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। ফলে রাজনৈতিক হিংসার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাই আগাম এই রুট মার্চ বলে জানিয়েছে পুলিস।