বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
বড়ঞা, কান্দি, ভরতপুর, রেজিনগর, বেলডাঙা, বহরমপুর ও নওদা, এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র গঠিত। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের অধিকাংশ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল লিড পেলেও কেন্দ্রটি দখল করতে পারেনি। ভরতপুর, রেজিনগর, বেলডাঙা ও নওদা, এই চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে লিড পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব সরকার। যারমধ্যে রেজিনগর কেন্দ্রে তাঁর ভোটের লিড সবচেয়ে বেশি, ৩৫ হাজার ৩৮৫। বেলডাঙায় প্রায় ৩০৮৮, ভরতপুরে প্রায় ৭৬৮৯ ও নওদায় প্রায় ২৮৮০টি ভোটের লিড পেয়েছেন। কিন্তু, তৃণমূল প্রার্থীর নিজের এলাকা কান্দি, বড়ঞা ও বহরমপুর, এই তিনটি কেন্দ্রে ভোটের লিড পেয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী। বহরমপুর কেন্দ্রে তাঁর ভোটের মার্জিন ‘রেকর্ড’ পরিমাণ, যা প্রায় ৮৯ হাজার ৬১টি। বড়ঞা ও কান্দিতে তাঁর ব্যবধানের পরিমাণ, যথাক্রমে ৩৮০১ এবং ৩৫ হাজার ৮৭১ টি ভোট।
এই পরিসংখ্যান নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, বহরমপুর পুরসভা, পঞ্চায়েত সমিতি ও অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত বর্তমানে তৃণমূলের দখলে। তা হলেও বহরমপুরের মানুষ অধীরবাবুর সঙ্গ ছাড়েননি। তাঁরা এখানে অধীরবাবুকে ঢেলে ভোট দিয়েছেন। বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে অধীরবাবুর লিডই তৃণমূলকে ডুবিয়েছে। তৃণমূলের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের লিড মিলিতভাবেও বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অধীরবাবুর ভোটের ‘দেওয়াল’ টপকাতে পারেনি। মূলত সেই ভোটেই কংগ্রেস প্রার্থী এখানে পুনরায় জয়ী হয়েছেন। এর পিছনে অনেকগুলি কারণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম শাসকদল তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। এখানে দীর্ঘদিন ধরে শাসকদল কয়েক গোষ্ঠীতে বিভক্ত। অনেকে ভোটের ময়দানে সক্রিয় ছিলেন না। অনেকে আবার তলে তলে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের আরএক অংশের বক্তব্য, শুধু দলীয় কোন্দল নয়, শহরে শাসকদলের কিছু নেতার চলন-বলন ঠিক ছিল না। কালো কাচ ঢাকা দামি এসি গাড়ি ছাড়া ওই নেতারা রাস্তায় চলাচল করা ভুলে গিয়েছেন। শহরে জবরদখল, পুকুর ভরাট বাড়লেও ওই নেতাদের তেমন মাথাব্যথা নেই। এসব কারণেই শাসকদলের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে অধীরবাবুর উপর আস্থা রেখেছেন শহর ও শহরতলির মানুষ। যার বেশিরভাই হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। তাছাড়া, সিপিএম তথা বামফ্রন্ট শরিকদের এবং বিজেপির একাংশের ভোট অধীরবাবুর ঝুলিতে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এবার লোকসভা ভোটে অধীরবাবুকে ‘বধ’ করাই ছিল তৃণমূলের অন্যতম টার্গেট। এজন্য কান্দি, বেলডাঙা ও বহরমপুরে তিনটি নির্বাচনী জনসভা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বহরমপুর শহরে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। পুরসভার কর্মীদের সঙ্গেও আলাদাভাবে বৈঠক করেছিলেন। এতকিছুর পরও বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে অধীরের ভোটকে ঠেকাতে পারেনি তৃণমূল।
ভোটের ফলফল থেকে জানা গিয়েছে, বহরমপুর শহরের বহু ওয়ার্ডে শাসকদল পিছিয়ে রয়েছে। শহরের ১৪, ১৬, ২০, ২২, ২৩, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিপুল ভোটে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলির কোনওটির দায়িত্বে দলের টাউন সভাপতি নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়, দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা বিশ্বদেব কর্মকার, আবার কোনওটিতে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক উৎপল পাল, দলের জেলা সভাপতি সুব্রত সাহার ছেলে সপ্তঋষি, আবার কোনওটির দায়িত্বে মিঠু জৈন, প্রাক্তন কাউন্সিলার কাঞ্চন মৈত্র প্রমুখ রয়েছেন। এরবাইরে ভোটের লিডের নিরিখে পুরসভার প্রাক্তন ভাইসচেয়ারম্যান জয়ন্ত প্রামাণিক সহ অনেক ওয়ার্ডে তৃণমূল তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তৃণমূলের টাউন সভাপতি বলেন, দলের সমস্ত নেতার ওয়ার্ডেই দলের ফল খারপ হয়েছে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।