গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
রামপুরহাট পুরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়াবাড়িতে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বসবাস সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়ের। ছেলে সাবর্ণির স্কুলেই তিনি ইংরেজির শিক্ষিকা। নানুরের নওয়ানগর গ্রামে বাপের বাড়ি হলেও কর্মসূত্রে তিনি রামপুরহাটে থাকেন। সাবর্ণির বাবা কৃষ্ণ চৌধুরী পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। সাবর্ণির প্রিয় বিষয় অঙ্কে পুরো ১০০ নম্বরই পেয়েছে। এছাড়া ইংরেজি, ভৌতবিজ্ঞান ও জীবন বিজ্ঞানে ৯৮ এবং বাংলা, ইতিহাস ও ভুগোলে ৯৭নম্বর করে পেয়েছে সে। তার মোট নম্বর ৬৮৫। পড়াশোনার সঙ্গে ক্রিকেটের ভক্ত সাবর্ণি অবসরে ছবি আঁকে, গান করে। তার পছন্দের ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনি।
সে জানায়, নিয়ম করে প্রতিদিন গড়ে ৯-১০ঘণ্টা পড়াশোনা করতাম। ছ’টি বিষয়ে গৃহশিক্ষক ছিল। এছাড়া স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছেও পড়তে যেতাম। আগামী দিনের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে সে বলে, শুধু পাঠ্যপুস্তক পড়লে হবে না। টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল ধরে রাখতে গেলে টেস্ট পেপার খুঁটিয়ে পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সাজেশন ফলো করতে হবে। সে বলে, আমি সিবিএসই’র সাজেশন ফলো করেছি। সেইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় না দেওয়াই ভালো। সে টেস্ট পরীক্ষায় ৬৭২নম্বর পেয়েছিল। এরপর সে আরও ভালো ফল করার লক্ষে জোর দেয়। সাফল্যও এসেছে। পড়াশোনার ফাঁকে সত্যজিৎ রায়ের লেখা বই পড়তে সে ভালোবাসে সাবর্ণি। টিভিতে খবরে চোখ রাখার পাশাপাশি ঋত্বিক রোশনের ছবিও দেখতে ভালোবাসে। সাবর্ণি বলে, আমার এই সাফল্যের পিছনে সবথেকে বেশি অবদান মায়ের। মা সবসময়ই আমাকে গাইড করতেন। মন দিয়ে পড়াশোনার জন্য উৎসাহ দিতেন। পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও কৃতিত্ব রয়েছে। সে বলে, আমি মেডিক্যাল নিয়ে পড়ে হার্টের চিকিৎসক হতে চাই।
মামা সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় নানুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জেনারেল ফিজিসিয়ান। মামাকে দেখেই অনুপ্রাণিত হয়ে চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। মা সঞ্চিতাদেবী বলেন, ছেলে এক থেকে দশের মধ্যে র্যা ঙ্ক করবে সেব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম। সেজন্য টেলিভিশনে আজ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সাংবাদিক সম্মেলন দেখছিলাম। যখনই ষষ্ঠ স্থানের তালিকায় ছেলের নাম ঘোষণা হয়, তখন আমি উৎফুল্ল হয়ে চিৎকার করে উঠি। তিনি বলেন, ছেলে অত্যন্ত লড়াকু, যথেষ্ট পরিশ্রমী। এই ফল না হলে পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকত না। ভালো ফল না হলে আগামী দিনে পড়াশোনার জন্য উৎসাহিত করতে পারব না, এমনটা মনে হচ্ছিল। অবশেষে ছেলে ভালো ফল করায় আমি খুশি এবং গর্বিত। এদিকে বহু বছর পর সাবর্ণির হাত ধরে স্কুল রাজ্যে প্রথম দশে ও জেলায় সেরা স্থান দখল করায় খুশি প্রধান শিক্ষক নূর উজ্জামান। তিনি বলেন, ১৮৮৬সালে স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়। ভারতবাসী যখন স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করছেন তখন শিক্ষার মাধ্যমে আন্দোলনকে সফল করার পথ দেখিয়েছে এই স্কুল। বহু ছাত্র এই স্কুল থেকে শিক্ষা অর্জন করে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। সেই ঐতিহ্যের ফল হচ্ছে এবারের মাধ্যমিকে ষষ্ঠ স্থান দখল করা। এটা আমাদের সকলের কাছে আনন্দের বিষয়। এই ফল অন্যান্য ছাত্রদের উৎসাহিত করবে।
এদিন সাবর্ণির বাড়িতে এসে দেখা করে পুষ্পস্তবক দিয়ে সংবর্ধনা জানান রামপুরহাটের এসডিপিও সৌম্যজিৎ বরুয়া ও আইসি আবু সেলিম। স্কুলে সাবর্ণির সঙ্গে দেখা করে তার আরও সাফল্য কামনা করেন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।