বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
প্রত্যন্ত গ্রাম বালিয়া। গ্রামে ঢোকার মুখে রয়েছে সৌরভদের বাড়ি। তার বাবা দীপক নন্দী গ্রাম ঘুরে শাঁখা ফেরি করেন। স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে থাকেন দীপকবাবু। গ্রামে কোনও স্কুল না থাকায় দু’টি গ্রাম পেরিয়ে রতনপুর হাইস্কুলে সৌরভ পড়তে যেত। প্রথম থেকেই সে স্কুলে প্রথম হয়ে আসছে। ফলে তার ভালো ফল নিয়ে শিক্ষকরা আশাবাদী ছিলেন। সবার সে আশা রেখেছে সে। তার বিষয়ভিত্তিক নম্বর হল বাংলায় ৮১, ইংরেজিতে ৮৬, গণিতে ৯০, ইতিহাসে ৮৮, ভৌতবিজ্ঞানে ৮৪, জীবনবিজ্ঞানে ৮৭, ভূগোলে ৯০।
তবে সৌরভের ফলাফল নিয়ে স্কুলে সকলে যখন খুশিতে মাতোয়ারা তখন বালিয়া গ্রামের বাড়িতে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। কারণ, সৌরভ মেডিক্যাল নিয়ে পড়ে চিকিৎসক হতে চায়। কিন্তু ছেলের ইচ্ছাপূরণে বাধ সেধেছে আর্থিক অনটন। দীপকবাবু বলেন, গ্রাম ঘুরে শাঁখা ফেরি করি। কিন্তু আগের মতো আর সেভাবে শাঁখা বিক্রি না হওয়ায় সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। ছেলেকে ঠিকমতো প্রাইভেট টিউটরও দিতে পারিনি। তার উপরে ছেলে এখন ডাক্তারি পড়বে বলছে, কিন্তু পড়ার খরচ কীভাবে জোগাড় করব বুঝে উঠতে পারছি না। সরকারি বা বেসরকারিভাবে যদি কোনও সাহায্য পাওয়া যায়, তাহলে ছেলের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মা পম্পা নন্দীও। তিনি বলেন, ডাক্তারি পড়াতে অনেক টাকার দরকার। শেষ সম্বল জমিটুকুও বিক্রি করলে সংসার চলবে কীভাবে ভাবতেই পারছি না। এদিকে, সৌরভ বলে, আমার ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে। কিন্তু পরিবারের সামর্থ্য নেই। কোনও সহৃদয় ব্যক্তি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে ভালো হয়।
পঞ্চম শ্রেণী থেকে বরাবরই সৌরভ স্কুলে প্রথম হয়ে এসেছে। সৌরভ বলে, আমার এই সাফল্যের পিছনে স্কুলের শিক্ষকদের অবদান সব থেকে বেশি। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাপ্পাদিত্য নন্দী বলেন, ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবি। ওর আচরণ ভালো। যেটা ওর কাছে সম্পদ। অনেক বড় হবে সৌরভ। এরকম একটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এই ফলাফলের পুরো কৃতিত্ব ওর একার। তবে আমরা ওর আরও ভালো ফলের আশা করেছিলাম। স্কুল থেকেই যাতে রেজাল্ট রিভিউ করা যায় সেটা আমরা ভাবছি। তিনি বলেন, সৌরভ ডাক্তারি পড়বে এটা আমাদের কাছে গর্বের। তার ডাক্তারি পড়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও স্কুলের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।