বিশ্বজিৎ মাইতি, তমলুক, বিএনএ: টানা আট বছর রাজ্যে মাধ্যমিকের পাশের হারে শীর্ষস্থান দখলে রাখল পূর্ব মেদিনীপুর। এবছরও কলকাতা সহ সব জেলাকে টেক্কা দিয়ে রাজ্যে প্রথম পূর্ব মেদিনীপুর। শুধু পাশের হারেই নয়, ৬৯৪ নম্বর পেয়ে এই জেলা থেকে রাজ্যে প্রথম হয়েছে ভগবানপুর ১ ব্লকের মহম্মদপুর দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের ছাত্র সৌগত দাস। দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার মোট ছ’জন ছাত্রছাত্রী এবার মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তিন জেলার সাফল্যে শিক্ষক¬ শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগী মহলে খুশির জোয়ার বইছে।
রাজ্যে প্রথম হওয়া সৌগত ছাড়াও তিন জেলায় আরও পাঁচ ছাত্রছাত্রী ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম ও দশম স্থানে রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের অলিগঞ্জ ঋষি রাজনারায়ণ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুপর্ণা সাউ ৬৮৫ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। ঘাটাল বিদ্যাসাগর হাইস্কুলের ছাত্র অনীক চক্রবর্তী ৬৮৪নম্বর পেয়ে সপ্তম স্থানে, ৬৮২ নম্বর পেয়ে এগরার জ্ঞানদীপ বিদ্যাপীঠের ছাত্রী অরুণিমা ত্রিপাঠি ও কাঁথি হাইস্কুলের ছাত্র প্রত্যুষ করণ নবম স্থানে রয়েছে। ঝাড়গ্রামের বাঁধগোড়া অঞ্চল হাইস্কুলের ছাত্র শুভদীপ মাজি ৬৮১নম্বর পেয়ে দশম স্থানে রয়েছে। তবে ২০১২ সাল থেকে একটানা মাধ্যমিকের পাশের হারে প্রথম স্থান ধরে রেখে রাজ্যবাসীকে বারবার চমক দিচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুর। এবছর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে মোট ৬১ হাজার ৯১৮ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছিল। তারমধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ছিল ২৮হাজার ৯৬৭ ও ছাত্রীর সংখ্যা ৩২ হাজার ৯৫১। এবার মোট ৯৬.১০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পাশ করেছে। যেখানে রাজ্যে পাশের হার প্রায় ৮৬.০৭শতাংশ। যদিও ২০১৮ সালের তুলনায় এবার শতাংশের বিচারে জেলায় পাশের হার সামান্য কমেছে। ২০১৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৯৬.১৩ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পাশ করেছিল। ২০১৭ সালে পাশের হার ছিল ৯৬.০৬ শতাংশ, ২০১৬ সালে পাশের হার ছিল ৯৩.১০ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৯৪.৮৬ শতাংশ, ২০১৪ সালে পাশের হার ছিল ৯২.৭৮ শতাংশ। একটানা আট বছর ধরে এই সাফল্যে বিভিন্ন মহলে উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে। শিক্ষানুরাগী মহলের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনও কৃতী ছাত্রছাত্রীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। সাফল্যের দিনে মহম্মদপুর দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের সহ শিক্ষক কানাইলাল গুছাইত বলেন, এটি আমাদের কাছে খুবই গর্বের দিন। আমাদের স্কুলের ছাত্র রাজ্যে প্রথম হয়েছে। সামগ্রিকভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা এবারও পাশের হারে রাজ্যে প্রথম হয়েছে। সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার প্রতি মানুষের সচেতনতা ও ভালোবাসার কারণেই এই সাফল্য আসছে।
জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, পঠন পাঠনের বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সবসময়ই এগিয়ে রয়েছে। শিক্ষার উন্নত পরিকাঠামো, সাধারণ মানুষের সচেতনতা, শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের দায়বদ্ধতা ও অভিভাবকদের সচেতনতার জন্য বারবার পাশের হারে এই জেলা প্রথম হচ্ছে। সৌগত দাস জেলার প্রান্তিক এলাকার স্কুল থেকে রাজ্যে প্রথম হয়ে জেলাবাসীকে গর্বিত করেছে।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আমিনুল আহসান বলেন, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ ও অনুরাগের ইতিহাস অনেক পুরানো। পাশের হারে রাজ্যে প্রথম হওয়ার পাশাপাশি এবার জেলার এক ছাত্র রাজ্যে প্রথম হওয়ায় আমরা ভীষণ খুশি। ওয়েস্টবেঙ্গল তৃণমূল সেকেন্ডারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি অনুপ ভট্টাচার্য বলেন, আগামী দিনে এই সাফল্যকে ধরে রাখার পাশাপাশি মেধা তালিকায় যাতে বেশি ছাত্রছাত্রী থাকতে পারে, তার জন্য আমাদের আরও নিবিড় প্রস্তুতি নিতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির জেলা সম্পাদক পূর্ণচন্দ্র সামন্ত বলেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্মৃতিবিজড়িত এই জেলা অতীতেও রাজ্যের শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। বর্তমান প্রজন্ম আজও একইভাবে সেই ধারা বহন করে চলছে। আমরা সকল ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।