বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ব্রতীনের বাড়ি শান্তিপুর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তিলিপাড়া এলাকায়। তার বাবা ধানতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক বিপ্লব মণ্ডল। মা ফুলিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বিজলি খাঁ। যৌথ পরিবারে মধ্যে থেকে ব্রতীন বড় হয়ে উঠেছে। মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় তার নম্বর ছিল ৬৬২। আর ফাইনালে নম্বর বেড়ে হয়েছে ৬৮৯। তার বাবা বিপ্লব মণ্ডল বলেন, মূলত অষ্টম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করার পর ছেলের মধ্যে একটা পরিবর্তন আসতে শুরু করে। নিজে থেকেই ও পড়াশোনা করত। তবে কোনও দিন জোর করে পড়াশোনার বিষয় ওর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।
ব্রতীনের ছ’জন গৃহশিক্ষক ছিল। অন্যদিকে, বাড়িতে দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পড়াশোনা করত। ব্রতীন বলে, বাবা ও মা দু’জনই স্কুলশিক্ষক হওয়ায় সুবিধা হয়েছে। বাবা ও মায়ের পরিচিত শিক্ষকরা আমাকে পড়াশোনার বিষয় পরামর্শ দিতেন। আমার এই সাফল্যের পিছনে স্কুলের অবদান রয়েছে। টেস্ট পরীক্ষার পরেও আমি নিয়মিতভাবে স্কুলে যাতায়াত করতাম। স্কুলের শিক্ষকরা সব সময় আমার পাশে থেকেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা বা গোয়েন্দা গল্পের যেকোনও বই পড়তে ভালোবাসে এই কৃতী ছাত্র। ভলিবল খেলাও তার প্রিয়।
এদিকে, ভাগ্নে ব্রতীনের এই খুশির খবর পেয়ে সুদূর আমেরিকাতে বসে মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে আনন্দ ভাগ করে নেন ব্রতীনের মামা সঞ্জয় খাঁ। ব্রতীনের মা বলেন, ছেলের ভালো ফল আশা করেছিলাম। কিন্তু ও যে এক থেকে দশের মধ্যে স্থান অর্জন করবে তা কখনই ভাবিনি। পাশাপাশি ছেলেকে কোনও দিন পড়াশোনার বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করিনি। ও নিজে থেকেই যেটুকু পড়াশুনা করেছে তাতেই এই সাফল্য এসেছে। প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজ পড়া নিয়ে বাবা ও ছেলের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা লেগে থাকে। কাগজে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ওদের মধ্যে আলোচনা হয়।
ছয় ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার এই কৃতী ছাত্রের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় প্রিয়। সময় পেলেই বাড়িতে জেঠতুতো দাদা বিপ্রজিত ও ভাই শুভজিতের সঙ্গে খেলাধুলোয় মেতে ওঠে সে। ব্রতীনের এই সাফল্য শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় নতুন পালক যুক্ত করছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। প্রসঙ্গত, ১৮৫৪ সালে স্থাপিত এই স্কুল ইতিহাসের অনেক সাক্ষী বহন করছে। ১৮৮৮ সালে ভুষণ চন্দ্র দাস প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। এরপর ১৯৬২ সালে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় শংকর মুখোপাধ্যায় সপ্তম হন। ১৯৭৪ সালে উচ্চমাধ্যমিকে ১১তম স্থান অর্জন করেন শুভেন্দুনাথ সরকার। ১৯৯৭ সালে রাজ্যে প্রথম হওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুব্রত নন্দী ১৯৯৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এরপর ২০১৯ সালে রাজ্যে মাধ্যমিকে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে এই স্কুলের কৃতী ছাত্র ব্রতীন মণ্ডল। এবিষয়ে শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কিংশুক চক্রবর্তী বলেন, ব্রতীনের সাফল্য আমাদের কাছে আনন্দ ও গর্বের।