বিএনএ, আসানসোল: আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি নেতারা মুখে জয়ের কথা বললেও ফলাফল ঘোষণার দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই যেন পালস রেট বাড়ছে দুই শিবিরেই। দু’পক্ষই খুঁটিনাটি হিসেব কষতে ব্যস্ত। দুই শিবিরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে ‘কী হবে কে জানে! কিছুই বুঝতে পারছি না’। এই লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে ধন্দে রয়েছে রাজনৈতিক মহলও। তাদের মতে, হাড্ডাহাড্ডি এই লড়াইয়ে যেই জিতুক না কেন, মার্জিন কম হবে।
তবে, এবার ভোটে অনেক কিছুই নির্ভর করছে সিপিএমের ভোটব্যাঙ্কের উপর। তাদের ভোট বিজেপির ঝুলিতে না পড়লে তৃণমূলের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর যদি বামকর্মীদের ভোট বিজেপির দিকে যায়, তাহলে গেরুয়া শিবিরের এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি। জেলায় বিজেপির তেমন মজবুত সংগঠন নেই। তাদের নিজস্ব ভোটব্যাঙ্কও তৈরি হয়নি। গতবারও সিপিএমের ভোট টেনে তারা বাজিমাত করেছিল। যদিও বিধানসভা নির্বাচনে সেই ভোট না পাওয়ায় তারা শিল্পাঞ্চলে কোথাও খাতা খুলতে পারেনি। সংগঠনের অভাবে ভোটের দিন তৃণমূলকে ময়দান দাপাতে দেখা গেলেও বিজেপি নেতাদের সেভাবে দেখা যায়নি। বরং দলের প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় কয়েকটি বুথে গিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলের প্লাস পয়েন্ট হল তারা জেলাজুড়ে ব্যাপক উন্নয়ন করে শহরের বাসিন্দাদের মন জয় করেছে। দ্বিতীয়ত, অন্যান্যবার ভোটের সময় নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও এবার সব গোষ্ঠীই মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছিল। নিজের নিজের এলাকায় দায়িত্বে থেকে দিনরাত একসঙ্গে কাজ করেছেন। তৃতীয়ত, ভোটের দিন নেতারা নিজেদের পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে পেরেছেন। এসব একাধিক কারণে তৃণমূলের এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপির হাতে সবচেয়ে বড় তাস ছিল হিন্দুত্ব ইস্যু। রামনবমীর পর থেকে এই তাস তারা আরও বেশি কাজে লাগায়। পাশাপাশি সিপিএমের নেতারা তাদের কর্মী-সমর্থকদের প্রকাশ্যে বিজেপিকে সমর্থন করতে বলায় গেরুয়া শিবিরে স্বস্তি ফিরেছিল। এসব একাধিক কারণে ভোটের ফল এবার কেউ নিশ্চিত হতে পারছে না। ফল নিয়ে জেলায় অনেকেই বাজি ধরছেন। কারও বাজি তৃণমূল আবার কারও বাজি বিজেপি।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের নেতাদের অনেকেই মনে করছেন মার্জিন খুব কম হলেও তারা জিতবেন। বারাবনি, পাণ্ডবেশ্বর এবং আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তারা সবচেয়ে বেশি লিড পাওয়ার আশা করছে। অন্যদিকে বিজেপি নেতৃত্বের আশা, গতবারের থেকে মার্জিন কম হলেও এবারও তারা জয়ী হতে পারে। তাদের নেতারা একান্তে মানছেন পাণ্ডবেশ্বর, আসানসোল উত্তর এবং বারবনি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রত্যাশিত ফল না-ও হতে পারে। তবে জেলার অনেকেই মনে করছেন, ফল নিয়ে রক্তচাপ বাড়ার পিছনে দু’দলের নেতাদের একাধিক কারণ রয়েছে। এই লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হওয়া দু’দলের নেতাদের কাছেই প্রেস্টিজ ইস্যু। তৃণমূল জিততে না পারলে তাদের দলের নেতাদের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে। অন্যদিকে, বিজেপি এখানে জিতেতে না পারলে জেলার নেতাদের মুখ লুকনোর জায়গা থাকবে না। কারণ, রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আসানসোল বিজেপির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত। তাই দু’পক্ষের কেউই স্বস্তিতে নেই।
আসানসোলের তৃণমূল নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, এবারের নির্বাচনে আমরা জিতবই। উন্নয়নমূলক কাজ দেখে মানুষ আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, জিতব আমরাই।