বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, বিষ্ণুপুরকে হেরিটেজের মর্যাদা দেওয়ার জন্য বহুবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই মর্যাদা পেলে বিষ্ণুপুরের চেহারা বদলে যাবে। কিন্তু, কোনও কারণে তা আজও হয়নি।
এবিষয়ে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল সাঁতরা বলেন, নির্বাচিত হলে দিল্লিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ছাড়াও আন্তর্জাতিক হেরিটেজ কমিটির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে। একই মন্তব্য করেছেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ।
প্রসঙ্গত, বিষ্ণুপুরে রয়েছে মল্লরাজা বীরহাম্বির স্থাপিত রাসমঞ্চ। পিরামিডের আকৃতির অভিনব ওই সৌধটির বিকল্প সারা দেশে আর কোথাও নেই। রয়েছে বিশালাকৃতির দলমাদল কামান। কথিত আছে, ১৭৪২খ্রিস্টাব্দে মারাঠা সর্দার ভাস্কর পণ্ডিতের বিষ্ণুপুর আক্রমণের সময় তৎকালীন মল্লরাজ গোপাল সিংহ ওই কামান ব্যবহার করেছিলেন। সাড়ে বারো ফুট দীর্ঘ ও প্রায় এক ফুট ব্যাসের মুখগহ্বরযুক্ত বিশালাকার ওই কামানের ব্যবহারের ফলেই শত্রুপক্ষকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছিল। মল্লরাজ গোপাল সিংহের পুত্র কৃষ্ণ সিংহ ১৭২৬খ্রিস্টাব্দে মাকড়া পাথরের তৈরি তিনটি মন্দিরকে নিয়ে একটি জোড়মন্দিরের শ্রেণী স্থাপন করেন। দলমাদল কামানের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত ওই মন্দির শ্রেণীতে রামায়ণ, মহাভারত ও কৃষ্ণলীলার অপূর্ব চিত্র রয়েছে। একই রাস্তার উপর রয়েছে মাকড়া পাথরের এক শিখরবিশিষ্ট নন্দলাল মন্দির ও রাধামাধব মন্দির। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্নতত্ত্ব দপ্তরের অফিস সংলগ্ন জায়গায় রয়েছে কালাচাঁদ মন্দির। ১৬৫৬খ্রিস্টাব্দে মহারাজ রঘুনাথ সিংহ মাকড়া পাথরের তৈরি গ্রামবাংলার চালার আদলে ওই মন্দির স্থাপন করেন।
এছাড়াও রয়েছে রাধাগোবিন্দ, শ্যামরাই, মৃন্ময়ী, রাধাশ্যাম, জোড়বাংলা, রাধালালজিউ, মদনমোহন, মল্লেশ্বর প্রভৃতি মন্দির। যা দেখতে দেশ বিদেশ থেকে প্রায় সারাবছর পর্যটকদের ঢল নামে। শীতের সময় তা দেখতে ভিড় উপচে পড়ে। একই শহরে এতকিছু নিদর্শন থাকায় বিষ্ণুপুরকে হেরিটেজের মর্যাদা দেওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা বহুবার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু, আজও তা হয়নি। তাই ভোটের আগে বিষ্ণুপুরের নাগরিকরা আরও একবার একই দাবিতে সরব হয়েছেন। সম্প্রতি ট্যুরিস্ট গাইড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত বিশ্ব ঐতিহ্য দিবসেও একই দাবি তোলা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যকে আরও বেশি সুন্দর করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প তৈরি করেছেন। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক মন্দির প্রাঙ্গণ এলাকায় সবুজের উপর সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প তৈরি করেছেন। একই সঙ্গে বিষ্ণুপুরের পর্যটনের উন্নয়নে ঐতিহাসিক লালবাঁধে বোট চালু, পোড়ামাটির হাট সহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তার জেরে পর্যটকদের কাছে তা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু, বিষ্ণুপুরকে হেরিটেজের মর্যাদা না দেওয়ায় নাগরিকদের মনে আক্ষেপ তৈরি হয়েছে।