কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত টিয়ারুল শেখের নিজস্ব চাষের জমি ছিল না। ১৫ কাঠা জমি ভাগে চাষের পাশাপাশি দিনমজুরির কাজ করতেন। গ্রামেই বিয়ে হয়েছে দুই মেয়ে তাজমিরা ও হীরার। বড় ছেলে মহতাব শেখ কেরলের মালাপুরমে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। ছোট ছেলে সোনিরুল হক কলকাতার একটি নির্মাণ সংস্থায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। বড় ছেলে মহতাব ভোটের জন্য ১০দিন আগে বাড়ি ফিরলেও ছোট ছেলে সোনিরুল হক কলকাতাতেই ছিলেন। বাবার খুনের ঘটনা শোনার পরেই মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ফেরেন।
বুধবার সকালে বালিগ্রামে টিয়ারুল শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, কাঠা দুয়েক জায়গার উপরে টালির ছাউনি দেওয়া ইটের তৈরি ছোট ছোট দু’টি ঘর। ঘর এবং বারান্দায় মাটির মেঝে। দেওয়ালের ভিতরে ও বাইরে প্লাস্টার করা হয়ে ওঠেনি। ঘরে-বাইরে সর্বত্র দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। আত্মীয়-পরিজন এবং প্রতিবেশী মিলিয়ে বিভিন্ন বয়সি শতাধিক মহিলা বাড়ির বারান্দা, উঠোনে ভিড় করে রয়েছেন। বারান্দায় ভিড়ের মধ্যে টিয়ারুল সাহেবের স্ত্রী সাহানুরা বিবি কেঁদেই চলেছেন। মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মায়ের পাশে বসে দুই মেয়েও অঝোরে কেঁদে চলেন। তাঁদের মাঝে বসে ছিল মৃতের নাতনি তথা তাজমিরা বিবির মেয়ে বছর দশেকের ফুলসুরা খাতুন। খুনের ঘটনার সময়ে দাদুর সঙ্গে ছিল ফুলসুরা। দুই মেয়ে, আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা মৃতের স্ত্রীর মাথায় জল দিচ্ছিলেন, হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করছিলেন।
একটু সুস্থ হতেই সাহানুরা বলেন, আমি বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ আমি ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। বড় ছেলে মহতাবের এবছরই প্রথম ভোট ছিল। তাই বাবা ও ছেলে দু’জনে একসঙ্গে বুথে যায়। স্বামীর ভোট দেওয়া হয়ে গেলেও ছেলে ভোটের লাইনে ছিল। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফুলসুরা বলে, দাদুর ভোট দেওয়া হলে আমি আর দাদু বাড়ি ফিরছিলাম। সেইসময় লালু শেখ, সাবিরুল শেখ, তাহাজুল শেখ, কামারুল শেখ, আবু হেনা সহ ১০-১২ জন দাদুকে ঘিরে ধরে হাঁসুয়া দিয়ে কোপাতে শুরু করে। উল্লেখ্য, লালু এবং তাহাজুল সম্পর্কে মৃত টিয়ারুল শেখের ভাইপো।
বুথ থেকে খুনের ঘটনাস্থলের দূরত্ব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পাশপাশি ঘটনার পরেই মুর্শিদাবাদ লোকসভার কংগ্রেস প্রার্থী আবু হেনা লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে যান এবং মৃতকে নিজেদের দলের সক্রিয় কর্মী বলে দাবি করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে আসরে নামেন। যদিও মৃতের স্ত্রী সাহানুরা বলেন, আমার স্বামী কখনও কোনও দলের হয়ে রাজনীতি করেনি। ভোট দিয়ে ফেরার পথে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে তৃণমূলের কয়েকজন এসে আমাদের ভোট দিতে বলেছিল। কিন্তু কেন খুন হল তা জানি না। মৃতের পরিবারের লোকজন এবং প্রতিবেশীরা বলেন, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ওই পরিবারের কেউ কোনওদিন কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। মৃতের দিদি মরিয়ম বিবি বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক ছিল না। পুলিস জানিয়েছে, তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।