বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এদিন মুখ্যমন্ত্রী যখন শান্তিপুরে আসেন ঘড়িতে সময় তখন সাড়ে তিনটে। শান্তিপুর থানা সংলগ্ন মাঠে নামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেলিকপ্টার। পূর্ব ঘোষণা মতো এদিন দুপুরের পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রীকে দেখার জন্য রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বহু মানুষ হেলিপ্যাডের চারিদিকে অপেক্ষায় ছিলেন। রানাঘাটে জনসভার মঞ্চ থেকেই দলনেত্রী এদিন রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী রুপালি বিশ্বাস, বিদায়ী সংসদ সদস্য তাপস মণ্ডল, নদীয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু ও মন্ত্রী রত্না ঘোষ করকে শান্তিপুরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এরপর রানাঘাটের জনসভা শেষ করে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই শান্তিপুর শহরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রা ঘিরে এদিন সকাল থেকেই শান্তিপুর শহর কার্যত ঘিরে ফেলা হয় নিরাপত্তার বেষ্টনীতে। নদীয়া জেলা পুলিস সুপার রুপেশ কুমার, অতিরিক্ত পুলিস সুপার(সদর) আমন দীপ, রাজ্য পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এদিন দফায় দফায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রদক্ষিণ করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে রেখেছিলেন।
শান্তিপুর থানার মাঠ থেকে বৈষ্ণব পাড়া, শ্যামচাঁদ মোড়, মালোপাড়া, বড় বাজার, মতিগঞ্জ মোড়, ডাকঘর মোড়, কাশ্যপ পাড়া, শ্যামবাজার হয়ে বাইগাছি মোড় এলাকায় এদিনের মুখ্যমন্ত্রীর রোড শো শেষ হয়। দীর্ঘ প্রায় চার কিলোমিটার পথ সহজেই পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেন মুখ্যমন্ত্রী। পথের দু’ধারে অসংখ্য মানুষ এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছিলেন। প্রার্থী রুপালি বিশ্বাস ছাড়াও তাঁর সঙ্গে এদিন পদযাত্রায় পা মেলান শান্তিপুর পুরসভার চেয়ারম্যান অজয় দে, বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য, রাজ্যসভার সদস্য আবিররঞ্জন বিশ্বাস, মন্ত্রী রত্না ঘোষ কর প্রমুখ।
কোথাও উলুধ্বনি, কোথাও আবার শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে এদিন রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলারা মুখ্যমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। কখনও নিরাপত্তারক্ষীদের বেষ্টনী পার করে উচ্ছ্বসিত জনতা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হাত মেলাতে এগিয়ে আসেন। শ্যামচাঁদ মোড় থেকে মালোপাড়ার দিকে আসতে বেশ কয়েকবার থমকে দাঁড়াতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। কোথাও রাস্তার দু’ধারে দ্বিতল বাড়ির ছাদ থেকে এলাকাবাসী তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। কোথাও আবার তরুণ প্রজন্ম মোবাইলের ফোকাসে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তার মাঝে একটি প্রতিবন্ধী সংগঠন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে নিজেদের দাবি দাওয়া সংক্রান্ত একটি কাগজও দেয়।
প্রসঙ্গত, শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য ও শান্তিপুর পুরসভার চেয়ারম্যান অজয় দে শিবিরের দ্বন্দ্ব ঘোচাতে বাধার মুখে পড়ে স্থানীয় নেতারা। নদীয়া জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দলীয় অভ্যন্তরে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেও সেই দূরত্ব মেটাতে পারেনি। কিন্তু এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তিপুরের মাটিতে পা রাখতেই বিধায়ক ও পুরসভার চেয়ারম্যান অনুগামীদের দ্বন্দ্ব ভুলে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এদিন শান্তিপুরে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পদযাত্রা আলাদা মাত্রা যোগ করে। ২০১৪ সালে নদীয়া জেলা প্রশাসনিক বৈঠক শান্তিপুরের স্টেডিয়াম মাঠে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর প্রায় পাঁচ বছর পর এদিন আবারও মুখ্যমন্ত্রীকে শান্তিপুরের রাস্তায় হাঁটতে দেখে, জনজোয়ারে ভাসল গোটা শান্তিপুর শহর।