কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ওয়ারেন্ট জারি হওয়া এক যুবকের খোঁজে পুলিস সাদিকপুর গ্রামে হানা দিয়ে অস্ত্র ভাণ্ডারের হদিশ পায়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন সূতি থানার ওসি অরূপ রায়। পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে সাদিকপুর ঘোষপাড়ার যুবক বীরচন্দ্র দাসকে প্রথমে আটক করা হয়। এরপর বীরচন্দ্রের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাড়ির গোয়াল ঘরের মেঝে এবং পাশের কালী মন্দির চত্বরের জমির মাটি খুঁড়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে চারটি পাইপগান, দু’টি সেভেন এমএম পিস্তল, সাইলেন্সার পাইপ সহ দু’টি মাস্কেট, একটি রিভলভার এবং বিভিন্ন ধরনের ২২রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর বীরচন্দ্র সহ যীশু দাস ও নিবিড় দাস নামে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলার পুলিস সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ধৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। সমগ্র ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃতদের মধ্যে বীরচন্দ্রের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল।
সোমবার ধৃতদের জঙ্গিপুর এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিসের এক অফিসার বলেন, সম্ভবত আগ্নেয়াস্ত্রগুলি চার থেকে পাঁচ বছর আগে কেনা। সেগুলি ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে ধৃতরা জেরায় জানিয়েছে। যাতে মরচে না ধরে সেজন্যই গুলি ও আগ্নেয়াস্ত্রগুলি প্লাস্টিকের প্যাকেটে মুড়ে মাটির নীচে মজুত করা হয়। পুলিসের নজর এড়াতেই ধৃতরা এমন কৌশল নিয়েছিল। পুলিস সুপার বলেন, জমি দখল সহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাদিকপুর গ্রামে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। ২০১০সালে সেখানে একটি খুনের ঘটনাও ঘটেছিল।
মালদহ ও ঝাড়খণ্ড সীমান্ত সংলগ্ন এই জেলায় আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা কারবার। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরও নামানো হয়েছে এই কারবারে। ইতিমধ্যে দু’জন মহিলা আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারিকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। ভোটের মুখে জেলার বাসিন্দাদের একাংশ এনিয়ে আতঙ্কিত। তাঁদের অভিযোগ, কারবারের পাশাপাশি জেলায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও বেড়েছে। কয়েকদিন আগে বহরমপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের এক নেতাকে গুলি করে খুন করা হয়। তার কয়েকদিন পর এক তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুন করা হয়। এলাকা দখল নিয়ে কয়েকটি মারপিটের ঘটনাতেও গুলি ও বোমার ব্যবহার করা হয়। এর আগে ডোমকল পুরভোট ও ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ভোটের ময়দান দাপিয়ে বেড়ায় দুষ্কৃতীরা। এককথায় জেলায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বোমার মজুত ভাণ্ডার গড়ে তুলেছে দুষ্কৃতীরা। গ্রামেগঞ্জে অস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি চলছে। কাজেই পুলিস সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বোমা উদ্ধার করতে না পারলে ভোটে জেলার মাটি রক্তাক্ত হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ভোট ঘোষণা হওয়ার কয়েকমাস আগে থেকেই গুলি, বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারের বিরুদ্ধে পুলিস অভিযানে নেমেছে। ইতিমধ্যে তারা স্থানীয় সহ বিহারের মুঙ্গের, মালদহ ও বীরভূমের বেশ কয়েকজন অস্ত্র কারবারিকে পাকড়াও করেছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২২৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬৪২টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২৫জনকে। ভোট ঘোষণার দু’সপ্তাহের মধ্যে ৩৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১২৮টি বোমা উদ্ধার এবং ৭৬জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিস ও প্রশাসনের কর্তারা বলেন, গুলি, বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এব্যাপারে প্রতিটি থানার পুলিস সতর্ক রয়েছে। ভোট নির্বিঘ্নে করতে জোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।