বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
কবিগুরুর সূচনা করা বসন্তোৎসব বিশ্বের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠানের জন্য একমাস ধরে সঙ্গীত ভবনে প্রস্তুতি নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। শান্তিনিকেতন ও বোলপুরের হোটেল, লজগুলি আগেরদিন থেকেই ভর্তি হয়ে ওঠে। দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা বসন্তোৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে উপস্থিত হয়েছিলেন। ভোরে বৈতালিক, তারপর শোভাযাত্রা ও মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান দেখার জন্য ভিড় জমায় দু’লক্ষেরও বেশি মানুষ। কিন্তু, এত লোকের ভিড় সামলানোর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে চূড়ান্ত অপ্রীতিকর ছবি ফুটে ওঠে আশ্রম মাঠ, আম্রকুঞ্জ সহ শান্তিনিকেতনজুড়ে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় কবিগুরু রচিত নৃত্যনাট্য সুন্দর-এর অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় বসন্তোৎসবের। পরদিন বৃহস্পতিবার ভোরে বৈতালিক হয়। তারপর ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল’ গানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বসন্তোৎসব। বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ভবনের কয়েকশো পড়ুয়া শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রা শেষে মূলমঞ্চে শুরু হয় অনুষ্ঠান। মঞ্চে এবছর ১৭টি গান ও নাচ হয়। এদিকে নজরদারি ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এবারও অনুষ্ঠান চলাকালীন আবির খেলা শুরু হয়ে যায়।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের তরফে সুষ্ঠুভাবে বসন্তোৎসব পরিচালনা করার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু, মানুষের ভিড় সামলাতে কার্যত ব্যর্থ হয় প্রশাসন। সাংবাদিক বৈঠক করে জানানো হয়েছিল, বিভিন্ন স্থানে ড্রপ গেট করা হয়েছে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আশ্রম এলাকায় মোতায়েন থাকার কথা ছিল প্রচুর সাদা পোশাকের পুলিস ও সিভিক ভলান্টিয়ার। প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। আবর্জনা ফেলার জন্য আশ্রম মাঠ ও আম্রকুঞ্জে বেশ কিছু ডাস্টবিনও রাখা হয়েছিল। কিন্তু, অনুষ্ঠান শেষে দেখা যায়, আশ্রম চত্বরে সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য প্লাস্টিকের প্যাকেট।
অনুষ্ঠান শুরু হতেই অত্যধিক ভিড়ের চাপে দিশাহারা অবস্থা হয় পর্যটকদের। মূলমঞ্চে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছু পরই ভেঙে পড়ে সম্পূর্ণ ব্যবস্থা। মানুষ ভিড় ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় বেশ কিছু জায়গায় ব্যারিকেড ভেঙে যায়। বয়স্ক ও শিশুদের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। যার জেরে বেশ কয়েকজন জখম হন। অভিযোগ, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতেও ব্যর্থ হয় পুলিস প্রশাসন। ফলে বোলপুর-শান্তিনিকেতন রোডে যান চলাচল বেশ কিছুক্ষণের জন্য সম্পূর্ণরূপে থেমে যায়।
পর্যটকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের এমন ব্যবস্থাপনায় তাঁরা হতবাক। অনেকেই জানিয়েছেন, আগামী বছরগুলিতে তাঁরা আর এখানে আসতে চান না। প্রাণটা এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছে, এটাই রক্ষে।
অন্যদিকে, শুক্রবার বসন্তোৎসবে অব্যবস্থা নিয়ে সরব হন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ডিজে বাজানো নিষিদ্ধ। কিন্তু, গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানমঞ্চে শব্দবিধি না মেনেই বক্স বাজানো হয়েছে সিবিএসসি পরীক্ষা চলাকালীন। পুলিস-প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। যথেচ্ছ আবির ছোঁড়ায় বায়ুদূষণও হয়েছে। জলের পাউচ মাঠের যত্রতত্র ফেলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আগামী বছরে বিষয়গুলিতে নজর না দিলে পরিবেশবিদ হিসেবে আমার যা করণীয়, তাই করব।