পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
কথিত আছে, বহু বছর আগে তারাপীঠে বর্ণময় দোল উৎসব হতো। কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের আয়োজনে ভাটা পড়ে। ফলে দোলের দিন পর্যটকদের ঠিকানা হয়ে উঠত কবিগুরুর আশ্রম শান্তিনিকেতন। প্রতিদিনই তারাপীঠে কয়েক হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে। কিন্তু, দোলের দিন খাঁ খাঁ করত মন্দির চত্বর। যে কয়েকজন পর্যটক আসতেন, তাঁরা রঙের ভয়ে হোটেল বন্দি হয়ে থাকতেন। তাই পর্যটক টানতে ও প্রাচীন ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে এবারই প্রথম এক টুকরো শান্তিনিকেতন তুলে আনার উদ্যোগ নিয়েছে মন্দির কমিটি।
মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল ৮টা থেকে পূর্ব সাগর মোড় থেকে শান্তিনিকেতনের আদলে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হবে। সেখানে থাকবে তারাপীঠ মন্দিরের চূড়ার আদলে ট্যাবলো। তার উপরে থাকবে তারামায়ের প্রতিকৃতি। নীচে থাকবে রাধাকৃষ্ণ। ঠিক তার পিছনে মন্ত্রোচ্চারণ করতে দেখা যাবে মন্দিরের সেবাইতদের। কয়েকশো মহিলা শঙ্খ বাজাবেন, উলুধ্বনি দেবেন। ঠিক তারপর থাকবে রাধাকৃষ্ণ সাজে কচিকাঁচাদের দল। দু’শো খোলের সহযোগে গাওয়া হবে সংকীর্তন। ধামসা মাদলের সঙ্গে আদিবাসী নৃত্য, ছৌনাচ, রায়বেঁশে, রণপা, বাঁশি শিল্পী, কলকাতা থেকে আগত ডাণ্ডি নাচের শিল্পী ও স্থানীয় স্কুলের ব্রতচারীরাও থাকবেন। সেই সঙ্গে থাকবেন রবীন্দ্র নৃত্য ও সংগীত শিল্পীরা।
হলুদ শাড়ি পরে মহিলারা প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ করবেন। গোটা তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করে সেই শোভাযাত্রা মন্দির লাগোয়া তারা উদ্যানে পৌঁছবে। সেখান থেকে কয়েকজন মহিলা মন্দিরে গিয়ে প্রথমে তারামায়ের চরণে আবির নিবেদন করবেন। এরপর একে অন্যকে রাঙিয়ে তুলতে আবির খেলায় মেতে উঠবেন সবাই। ইতিমধ্যে তার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে ফেলেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী।
তবে টিআরডিএ বৈঠক করে ঠিক করেছে, তারাপীঠে আর রং নয়। ভেষজ আবির নিয়ে শান্তিনিকেতনের আদলে বসন্তোৎসবে মেতে উঠবেন তীর্থভূমির বাসিন্দারা। ফলে কেউ রং খেললে বা অন্যকে মাখালে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পুলিস মোতায়েন থাকবে। নজর রাখবে মন্দির কমিটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীও।
টিআরডিএর ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, সবুজ, হলুদ ও গোলাপি রঙের প্রচুর পরিমাণ আবির মজুত করা হয়েছে। তারমধ্যে সবুজ আবিরের পরিমাণ বেশি। তিনি বলেন, শোভাযাত্রায় প্রায় ২০ কেজি নকুলদানা ও কয়েকশো জলের বোতল রাখা হবে। কিন্তু নকুলদাদা কেন? তাহলে কি অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশ মতো নকুলদানা বিলি করার সিদ্ধান্ত? উত্তরে সুকুমারবাবু বলেন, এই উৎসব সবার। এর সঙ্গে রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। নকুলদানা দেবদেবীর পুজোয় অর্ঘ্য রূপে নিবেদন করা হয়। তাই তারামায়ের প্রসাদ হিসেবে নকুলদানা বিলি করা হবে।
অন্যদিকে, তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় ও সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেন, দোলযাত্রা বহু পুরনো। কিন্তু, তারাপীঠে আজ এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। কারণ, বৃন্দাবন, মথুরা, মায়াপুর ও শান্তিনিকেতনে সঙ্গে দোল উৎসব এখানেও পালিত হচ্ছে। যারা খবর পেয়েছেন তাঁরা এদিন থেকেই তারাপীঠে আসতে শুরু করেছেন। আবার যাঁদের পুজো দিয়ে এদিনই বাড়ি ফেরার কথা ছিল, তাঁরাও বসন্তোৎসবের আয়োজন জানতে পেরে হোটেলেই থেকে গিয়েছেন। তাঁর দাবি, শোভাযাত্রায় প্রায় দু’হাজার কচিকাঁচা থেকে যুবক যুবতীরা অংশগ্রহণ করবেন। মানুষ সবাই এক। কোনও ভেদাভেদ নেই। এই রঙের উৎসবে আমরা সবাইকে আপন করে নেব। সম্প্রীতির উৎসবে পরিণত হবে এই দোলযাত্রা।
এদিকে এই উৎসব থেকেই পুরোদমে প্রচারে নামবেন শতাব্দী রায়। অনুগামীদের নিয়ে হাজির হতে এদিন রাতেই তিনি রামপুরহাটে এসে পৌঁছছেন। ভোটারদের সঙ্গে আবির নিয়ে খেলতে দেখা যাবে এই তারকা প্রার্থীকে। ভোটারদের আবির দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর সঙ্গে চলবে প্রচারও। শতাব্দী রায় বলেন, দোলের দিন সকালে রাজনগরে প্রচারে যাওয়ার কথা ছিল। ওরা যখন বলল বসন্তোৎসবের আয়োজন করেছি, তখন তারাপীঠেই উপস্থিত থাকব। বিকেলে রাজনগর যাব। তিনি বলেন, তারাপীঠেই প্রথমবার আবির খেলা উপভোগ করব।