বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
শহরের পরিকাঠামোর আমূল সংস্কারে নিকাশি ব্যবস্থা ও ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎলাইনের কথা বলা হয়েছে। নিকাশি জল নদীতে ফেলার আগে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে শোধন করতে হবে। হেরিটেজ কমিটি গঠন করতে হবে এবং ওই কমিটিতে শহরের বিদ্বজ্জনদের রাখার কথা বলা হয়েছে।
বৈষ্ণবতীর্থ নবদ্বীপ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান ও কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের সাধনক্ষেত্র। বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, মুসলিম, খ্রিস্টান সবধর্মের সমন্বয়ের ক্ষেত্র নবদ্বীপকে হেরিটেজ শহর হিসেবে গড়ে তোলার দাবি দীর্ঘদিনের। ২০১৭ সালে নবদ্বীপের রবীন্দ্র সংস্কৃতি মঞ্চে প্রশাসনিক বৈঠক শেষে দলীয় একসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই শহরকে হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। সেইমতো কাজ শুরু হয়ে যায়। নবদ্বীপের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা ও নবদ্বীপ পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা হেরিটেজ কমিটি গঠন করেন। নবদ্বীপ পুর এলাকার ও নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির অধীনস্ত সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকার হেরিটেজ স্থানকে নথিভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেন।
পুরাতত্ত্ববিদরা মনে করেন, গঙ্গার তীরবর্তী এই ভূখণ্ড আদতে বৌদ্ধদের আবিষ্কার। পরবর্তীকালে যা নবদ্বীপ নামে পরিচিতি লাভ করে। নবদ্বীপের উদ্ভব নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তর মতভেদ থাকলেও নবদ্বীপের বিদ্যাচর্চা ও তন্ত্র সাধনা যে সেই বৌদ্ধ ধারাবাহিকতার ফল, তা নিয়ে সকলে একমত।
নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে নবদ্বীপ জুড়ে ২৭০০ বছরের ইতিহাস পাওয়া যাচ্ছে। একসময়ে সেন রাজাদের রাজধানী থাকায় বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। আজও মায়াপুরের বামনপুকুরে বল্লালঢিবি রয়েছে। নবদ্বীপ শহর শুধুমাত্র বৈষ্ণব তীর্থভূমি বা ভক্তি আন্দোলনের পীঠস্থানই নয়। এখানে একসময় শাক্ত ও শৈব ধর্মের কেন্দ্রভূমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিখ্যাত তন্ত্রসাধক, শক্তির উপাসক, বৃহৎ তন্ত্রসার প্রণেতা, দক্ষিণাকালীর মূর্তির প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের সাধনক্ষেত্র এই নবদ্বীপ। পাল যুগে এখানে বৌদ্ধচর্চাও হয়েছে।
রাজ্যের পর্যটন বিকাশে হেরিটেজ কমিশনের প্রস্তাব মেনে মুখ্যমন্ত্রী শহরকে হেরিটেজ মর্যাদা দিতে উদ্যোগী হন। আইআইইএসটি ও খড়গপুর আইআইটিকে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করার জন্য নিয়োগ করা হয়। আইআইইএসটি ও খড়গপুর আইআইটি বিস্তারিত গবেষণার পরে রিপোর্ট পেশ করেছে। আইআইইএসটির অধ্যাপক আদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক রিপোর্টে নবদ্বীপকে হেরিটেজ শহরের তকমা দিতে ৭১টি এলাকাকে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে যেমন বামনপুকুর পঞ্চায়েত আছে, তেমনই আছে গঙ্গার পূর্বকূলের প্রাচীন মায়াপুরের বেশকিছু এলাকা। কারণ, গবেষকদের মতে, চৈতন্য মহাপ্রভুর যুগে মায়াপুর (মিয়াঁপুর চর), স্বরূপগঞ্জ নবদ্বীপের অংশ ছিল। সেইসময় নবদ্বীপের অবস্থান ছিল ভাগীরথীর পূর্বকূলে। ১৬৬০ সাল পর্যন্ত এই শহরের অবস্থান ছিল ভাগীরথীর পূর্বকূলজুড়ে। পরবর্তীকালে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে অবস্থান হয়েছে গঙ্গার পশ্চিমপাড়।
প্রথম পর্যায়ের রিপোর্ট পাওয়ার পরে পুর ও নগর উন্নয়ন দপ্তর, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর, হেরিটেজ কমিটি পর্যালোচনায় বসেছে। রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন সচিব সুব্রত গুপ্ত বলেন, গ্রিনসিটি প্রকল্পের মাধ্যমে নিকাশি ব্যবস্থা ও ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎলাইন তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। নবদ্বীপ পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, নবদ্বীপের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহার উদ্যোগে ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় ২০১৭ সালে নবদ্বীপ পুর এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু হয়ে গিয়েছে। গ্রিনসিটির কাজ চলছে। হেরিটেজ কমিটি গঠিত হয়েছে। দ্রুত নবদ্বীপকে হেরিটেজ শহর ঘোষণার জন্য সমস্ত দপ্তরে আবেদন জানানো হয়েছে ও সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।