বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
বৃহস্পতিবার কুলটির মিঠানি গ্রামে ধুমধাম করেই তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। সমস্তরকম প্রস্তুতি বুধবার দুপুরেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনে ঠাসা। কে কে বরযাত্রী যাবে, কে বরকর্তা হবে, এসব নিয়ে বিয়েবাড়ি একবারে মুখরিত ছিল। এমনই আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যেই হঠাৎ করেই খবর আসে পাত্রের বাবা নবীন বাউরি কালিপাহাড়ির কাছে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গিয়েছেন। এই খবর শুনেই বিয়েবাড়ির আনন্দঘন পরিবেশ মুহূর্তে বদলে যায় বিষাদে।
বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাপিবাবু। কিন্তু, তাঁর হবু স্ত্রীর কী হবে, তা ভেবে তিনি কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না। গায়ে হলুদ হয়ে গিয়েছে। তাই বিয়ে বাতিল হয়ে গেলে মেয়ে লগ্নভ্রষ্টা হয়ে যাবে। সেকারণে পাত্রপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে বুধবার রাতেই বিয়ে হবে। সেইমতো বাবার মৃতদেহ মর্গে পাঠিয়ে বিয়ে করতে সাদামাটা পোশাকেই মিঠানির উদ্দেশে রওনা দেন বাপি। ঘটনার কথা মেয়ের বাড়ির লোকজনও জানতে পেরে যান। তাঁরাও মেয়েকে নতুন শাড়ি পরিয়ে তৈরি করে রাখেন। রাতের দিকে নিয়ম মেনে কোনও আড়ম্বর ছাড়াই বিয়ে সম্পন্ন হয়।
পাত্রীর বাবা বৃন্দাবন বাউরি বলেন, মেয়েকে বাপি লগ্নভ্রষ্টা হওয়ার থেকে বাঁচিয়েছে। ওর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বাবার মুখাগ্নি হয়ে গেলে হিন্দুশাস্ত্র মতে অশৌচ শুরু হয়ে যায়। এরপর একবছর বিয়ে হতো না। তাই বিয়ে না হলে খুব সমস্যায় পড়ে যেতাম। বরের বাড়ির লোকজন উদারতার পরিচয় দিয়েছে। মেয়ের দাদা রাম বাউরি বলেন, এমনটা হবে ভাবিনি। পাত্রপক্ষ এগিয়ে না এলে আমরা সমস্যায় পড়তাম। বাপি অবশ্য কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তিনি অঝোরে কেঁদে চলছেন। বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে তিনি বলেন, কীভাবে এরকম হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বাপির বাবা ওইদিন দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরে কালিপাহাড়ির কাছে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে বাড়ির লোকজন মনে করছেন। বাপির মামা রঞ্জিত বাউরি বলেন, ওই রাতে বিয়ে দেওয়া ছাড়া আমাদের কাছে কোনও উপায় ছিল না। এদিন নবীনবাবুর মৃতদেহ আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।